আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুস্থ খাবারের পরামর্শ প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। কখনও কোনও নতুন ট্রেন্ড আসে, আবার কিছুদিন পর তা উল্টে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে আসলে কোন খাবার হৃদয়কে সুরক্ষা দেয়?
চীনের সিচুয়ান প্রদেশে করা একটি বড় গবেষণা এই প্রশ্নের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রায় ৫৪,৮৫৯ জন প্রাপ্তবয়স্ককে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ দিন ঝাল খাবার বা মরিচ খেতেন, তারা হৃদরোগ ও মস্তিষ্কজনিত রক্তপ্রবাহজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার দিকে কম ছিলেন। বিশেষত ইসকেমিক স্ট্রোক অর্থাৎ মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। যত বেশি ঝাল খাওয়া হয়েছে, তত কমেছে ঝুঁকি।
গবেষণায় দেখা যায়, মাঝারি মাত্রার ঝালের সঙ্গে সামগ্রিকভাবে হৃদয় ও মস্তিষ্কজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়। ছোটবেলা থেকেই ঝাল খাওয়ার অভ্যাস থাকলে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সুরক্ষা বেশি পাওয়া যায়। তবে এটি হেমোরেজিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।
ঝাল স্বাদের মূল উপাদান হল ক্যাপসাইসিন। এটি শরীরের স্নায়ু ও রক্তনালীর আবরণে থাকা একটি বিশেষ সেন্সরকে সক্রিয় করে। প্রাণী-ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ক্যাপসাইসিন সেই সেন্সরকে উদ্দীপিত করে শরীরে প্রাকৃতিক নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়ায়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত সহজে প্রবাহিত হয়। এভাবে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুন: ভারতের ১০০ টাকার মূল্য নেপালে কত? দেখলেই চোখ কপালে উঠবে
শক্ত ও নমনীয় রক্তনালী হৃদয়ের কাজকে সহজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির ঝুঁকি কমায়। শরীর যখন বাড়তি রক্তপ্রবাহ চায় যেমন ব্যায়াম বা মানসিক চাপের সময় তখন সুস্থ ধমনীগুলো সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ঝাল খাবার খাওয়ার ফলে নাইট্রিক অক্সাইড সম্পর্কিত প্রোটিনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, যা রক্তনালীর কার্যকারিতা বাড়ায়। তাই মরিচের প্রভাব শুধু মুখে জ্বালাপোড়ায় সীমাবদ্ধ নয় ভেতরে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ঘটায়।
চীনে ২০০৪-২০১৩ সালের একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে ৬-৭ দিন ঝাল খেতেন, তাদের মোট মৃত্যুহার ১৪ শতাংশ কম ছিল। একই প্রবণতা হৃদরোগ ও শ্বাসজনিত রোগেও পাওয়া গেছে। ইতালির আরেকটি গবেষণায়ও দেখা গেছে, সপ্তাহে ৪ দিনের বেশি মরিচ খাওয়া মানুষদের হৃদরোগজনিত মৃত্যুহার কম। এমনকি খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন হলেও মরিচ সুরক্ষামূলক প্রভাব বজায় রেখেছে।
অবশ্যই এসব গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক। তাই একেবারে নিশ্চিত করে বলা যায় না যে ঝাল খাবারই সরাসরি রোগ কমায়। তবে চীন, ইউরোপসহ নানা স্থানের তথ্য একই ফলাফল দেখায়, যা শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়। ঝালের মাত্রাও গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঝাল নয়, বরং নিয়মিত হালকা বা মাঝারি মাত্রার ঝাল সবচেয়ে বেশি উপকার দেয়।
ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে যেমন কতটুকু ক্যাপসাইসিন মানুষের শরীরে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে তা পরীক্ষা করা। এছাড়াও নাইট্রিক অক্সাইডের কার্যক্রমে মরিচ কীভাবে প্রভাব ফেলে, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
সবশেষে বলা যায়, মরিচ কোনো ওষুধ নয় এবং একা খেয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে বড় আকারের গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে দেখা গেছে, যারা ঝাল খাবার বেশি খান, তাদের হৃদয় ও মস্তিষ্কের রোগ তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই মাঝারি মাত্রায় নিয়মিত ঝাল খাবার খাওয়া সুস্থতার জন্য সহায়ক হতে পারে।
