আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৪০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন অস্টিওআর্থ্রাইটিস-এ ভুগছেন। এটি বর্তমানে অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ। এই রোগ ধীরে ধীরে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় করে, আর একবার ক্ষয় শুরু হলে তা পুনরুদ্ধারের কোনও উপায় নেই। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা মূলত ব্যথানাশক ওষুধের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এবং শেষে জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের ওপর নির্ভর করে।
তবে, ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক নতুন বিকল্পের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এক বছরব্যাপী র্যাদন্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালে দেখা গেছে, হাঁটার সময় পায়ের কোণ পরিবর্তন করা অংশগ্রহণকারীরা ব্যথা থেকে তেমনই আরাম পেয়েছেন, যেমনটা সাধারণ ওষুধ খেলে মেলে। এর পাশাপাশি, তাদের হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয়ও তুলনামূলকভাবে ধীর হয়েছে।
আরও পড়ুন: বদলে গেল এটিএম থেকে টাকা তোলার নিয়ম, দেখে নিন এখনই
গবেষকরা বলেছেন, আমরা জানতাম, অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হাঁটুর ওপর বেশি চাপ রোগকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে, আর পায়ের কোণ পরিবর্তন করলে চাপ কমানো সম্ভব। তবে এর আগে কোনও প্লেসবো-নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা ছিল না। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (NIH)-এর সহায়তায় পরিচালিত এই গবেষণায় হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ের অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ রোগ সাধারণত হাঁটুর ভেতরের দিকের অংশে বেশি হয়, যেখানে চাপও বেশি পড়ে।
তবে কোন কোণে হাঁটলে চাপ কমবে, তা রোগীভেদে আলাদা। আগের গবেষণাগুলোতে সবাইকে একই কৌশল দেওয়া হয়েছিল, ফলে অনেকের ক্ষেত্রে চাপ কমেনি বরং বেড়েছিল। এবার প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর জন্য ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে উপযোগী হাঁটার ধরণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথম দুই সেশনে অংশগ্রহণকারীরা এমআরআই করিয়েছেন এবং প্রেসার-সেন্সিটিভ ট্রেডমিলে হাঁটতে গিয়ে মোশন-ক্যাপচার ক্যামেরায় পর্যবেক্ষিত হয়েছেন। এতে বোঝা গেছে, পা ভেতরে না বাইরে ঘোরালে হাঁটুর চাপ কতটা কমে এবং ৫° না ১০° কোণ সবচেয়ে কার্যকর। যাদের ক্ষেত্রে কোনও কোণ পরিবর্তনে চাপ কমেনি, তাদের বাদ দেওয়া হয়। আগের ব্যর্থ গবেষণার কারণ সম্ভবত এই রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা ছিল।

মোট ৬৮ জন অংশগ্রহণকারীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—
প্লেসবো গ্রুপ: তাদের বলা হয় স্বাভাবিক হাঁটার ভঙ্গিই বজায় রাখতে।
ইন্টারভেনশন গ্রুপ: তাদের সেই কোণ পরিবর্তন শেখানো হয়, যা তাদের হাঁটুর চাপ সবচেয়ে কমায়।
দুই গ্রুপই ছয় সপ্তাহ ল্যাব-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নেন। হাঁটার সময় পায়ের শিনে লাগানো একটি ডিভাইস হালকা কম্পনের মাধ্যমে ফিডব্যাক দেয়, যাতে তারা সঠিক কোণ বজায় রাখতে পারেন। পরে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট এভাবে হাঁটতে বলা হয়।
ব্যথা কমার মাত্রা প্লেসবো গ্রুপের তুলনায় এমন ছিল যা আইবুপ্রোফেন (সাধারণ ব্যথানাশক) এবং অক্সিকন্টিন (শক্তিশালী নারকোটিক)–এর মাঝামাঝি। এমআরআই-তে দেখা গেছে, ইন্টারভেনশন গ্রুপে কার্টিলেজ ক্ষয় উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীরাও এই পদ্ধতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। একজন বলেন, আমাকে কোনও ওষুধ খেতে হয় না। কোনও ডিভাইস পরতে হয় ন। এটা এখন আমার শরীরের অংশ হয়ে গেছে, যা আমায় আজীবন সঙ্গ দেবে।
৩০–৫০ বছরের মানুষদের ক্ষেত্রে অস্টিওআর্থ্রাইটিস মানে বহু বছর ওষুধে ভরসা রাখা। যতক্ষণ না জয়েন্ট প্রতিস্থাপন দরকার হয়। এই নতুন পদ্ধতি সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে।
তবে এটি ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আনতে প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে। মোশন-ক্যাপচার কৌশল ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। গবেষকরা চান ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি ক্লিনিকে সহজে প্রয়োগ করা যাক, এমনকি স্মার্ট সেন্সর, মোবাইল ভিডিও বা “স্মার্ট জুতা” ব্যবহার করে। তারা বলেন, আমরা এমন প্রযুক্তি তৈরি করছি যা মোবাইল সেন্সরের মাধ্যমে সহজেই ব্যক্তিগতভাবে এই হস্তক্ষেপ নির্ধারণ ও প্রয়োগ করতে পারবে। তবে ব্যাপকভাবে প্রয়োগের আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
