আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সন্ত্রাসবাদকে ঘিরে ভারতের কঠোর বার্তা দিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু দেশ সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রনীতিতে পরিণত করেছে।


বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে অভিবাদন জানান। তিনি বলেন, “ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের নমস্কার।” এরপরই তিনি জাতিসংঘ সনদের মূল আদর্শের কথা স্মরণ করান: “জাতিসংঘ আমাদের শুধু যুদ্ধ ঠেকাতে নয়, শান্তি গড়ে তুলতে বলেছে। শুধু অধিকার রক্ষাই নয়, প্রতিটি মানুষের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার দায়িত্বও দিয়েছে।”


পাকিস্তানকে সরাসরি নাম না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দিকে স্পষ্ট আঙুল তোলেন। তিনি সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগাঁওতে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন, যেখানে ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। জয়শঙ্কর বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত এক প্রতিবেশী দেশের কারণে এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, যে দেশটি বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক দশক ধরে বড় বড় আন্তর্জাতিক জঙ্গি হামলার সূত্র মেলে এক দেশেই। এবছর এপ্রিল মাসে পাহালগাঁওতে নিরীহ পর্যটকদের হত্যাকাণ্ডই তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।”

আরও পড়ুন:  সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ: সর্বোচ্চ ৮.৪% সুদে ফিক্সড ডিপোজিট


ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “অধিকার রক্ষা করার পাশাপাশি আমাদের হামলার মুখোমুখি হতে হবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কুসংস্কার, সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ও ভয়ের সংমিশ্রণ।”


তিনি আরও জানান, ভারত সবসময় নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। তবে এই বার্তা শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য। তার ভাষায়, “যখন দেশগুলো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করে, যখন জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র শিল্পের মতো পরিচালিত হয়, যখন জঙ্গিদের প্রকাশ্যে মহিমান্বিত করা হয়—তখন সেই কার্যকলাপের নিঃশর্ত নিন্দা হওয়া জরুরি।”


জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে দেন, পাকিস্তানকে পাহালগাঁও ঘটনার পর যেসব দেশ নীরবে প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদেরও এর মাশুল দিতে হবে। তার মতে, সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে, নামী জঙ্গিদের আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের গোটা পরিবেশব্যবস্থার ওপর নিরলস চাপ বজায় রাখতে হবে।


অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জাতিসংঘে দেওয়া বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, পাহালগাঁও হামলার পর ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতেও ভারতের নীতির সমালোচনা করে বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরিদের “স্বাধীনভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার” আদায়ের আন্দোলনে পাশে থাকবে।


ভারত অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসলামাবাদ জাতিসংঘকে ব্যবহার করছে “অযৌক্তিক নাটক” মঞ্চস্থ করার জন্য। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদকে প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যও তীব্র সমালোচনা করে ভারত। জয়শঙ্করের ভাষণ তাই শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক বার্তাই নয়, বরং বিশ্বকে একসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য জোরালো আহ্বান হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।