আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স ২ কোটি ৬০ লক্ষ বছর। দেখতে তিমির মতো, কিন্তু মুখে হাঙরের মতো দাঁত আর চোখে হিমশীতল চাহনি। আজকের শান্ত স্বভাবের তিমির সঙ্গে মেলানো যায় না এর স্বভাব। সমুদ্রে কোনও অবলা প্রাণী পেলেই ভয়ঙ্কর শিকারির মতো ছিন্নভিন্ন করে ফেলত তারা। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় আবিষ্কার করেছেন এমনই এক প্রাচীন তিমির জীবাশ্ম। নাম- জানজুসিটাস ডালার্ডি ।
প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগের জীবাশ্মটি থেকে বিরল এই প্রজাতিটিকে শনাক্ত করেছেন ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিউজিয়ামস-এর গবেষকরা। আশ্চর্যের বিষয় জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেন ভিক্টোরিয়ার এক সাধারণ ব্যক্তি। নাম রস ডালার্ড। ২০১৯ সালের জুন মাসে সমুদ্রতটে হাঁটার সময় তিনি এক অজানা সামুদ্রিক প্রাণীর করোটি, কর্ণঅস্থি ও দাঁত খুঁজে পান। এহেন দেহাবশেষ যে স্বাভাবিক নয়, তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন তিনি। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে সেগুলি তিনি দান করে দেন জাদুঘরে। তাঁর নামেই নতুন এই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে।
যাঁরা এই তিমির সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ গবেষণাটি করেছেন সেই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রুয়েরিধ ডানকানের কথায়, “এটির আকার নীল তিমির মতো বিশাল নয়। এখনকার তিমির সঙ্গে এর মূল তফাৎ দাঁত আর চোখে। ইডেন চোখ ছিল বড় বড় আর ছিল মুখভর্তি ধারালো দাঁত। বিষয়টা কিছুটা তিমির দেহে হাঙ্গরের অবতারের মতো। বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর, কিন্তু আদপে মারাত্মক হিংস্র।”
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভিক্টোরিয়ায় এ নিয়ে এই ধরনের তৃতীয় জীবাশ্ম শনাক্ত করা হল। তিমির এই প্রজাতিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যামালডন্টিড। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এটাই প্রথম জীবাশ্ম যেখানে দাঁত এবং অন্তঃকর্ণের গঠন এতটা অক্ষতভাবে পাওয়া গেছে। এর থেকে বোঝা যাবে প্রাচীন তিমির শ্রবণ যন্ত্র কীভাবে কাজ করত। তারা কীভাবে চলাফেরা করত এবং সমুদ্রে শিকার ধরত।
গবেষকরা জানাচ্ছেন আকারে ডলফিনের মতো হলেও জানজুসিটাস ডালার্ডি ছিল ভয়ঙ্কর শিকারি। ছোট থুতনি, সামনের দিকে বড় বড় চোখ আর ধারালো দাঁত ছিল শিকারের প্রধান অস্ত্র। ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের উষ্ণ অগভীর সমুদ্র চষে বেড়াত এরা। ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিউজিয়ামস-এর সিনিয়র কিউরেটর এরিখ ফিটজেরাল্ড বলেন, “এ ধরনের আবিষ্কার প্রমাণ করে সাধারণ মানুষও ইতিহাস গড়তে পারেন। রস ডালার্ডের দান করা জীবাশ্ম আমাদের সামনে তিমির বিবর্তনের এক সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।”
আরও পড়ুনঃ মাদকের নেশা খুঁজতে গিয়ে 'শরীরের নেশায়' বুঁদ পুলিশ! বিস্ফোরক ঘটনায় হইচই বেঙ্গালুরুতে...
সম্প্রতি খ্যাতনামা জুলজিক্যাল জার্নাল অব দ্য লিনিয়ান সোসাইটিতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জীবাশ্মটি এক কিশোর তিমির। মৃত্যুর সময় সেটি লম্বায় দু’মিটারের সামান্য বেশি ছিল। তবে গবেষণার দিক থেকে জীবাশ্মটির গুরুত্ব অসীম। কারণ এই ম্যামালডন্টিড গোষ্ঠীর তিমিদের দেখা মিলেছিল অলিগোসিন যুগে, অর্থাৎ ৩ কোটি থেকে ২ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে। এ থেকে বোঝা যায় কোটি কোটি বছর আগে কেমন ছিল সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলে এখনও বিভিন্ন বিচিত্র ধরনের তিনি পাওয়া যায়। তার সঙ্গে এই প্রাচীন শিকারী তিমির কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা।
