আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) ১৭ নভেম্বর ২০২৫-এ ট্রাম্পের ২০ দফা Gaza Plan-এর ভিত্তিতে পাস করা ২৮০৩ নম্বর প্রস্তাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে প্যালেস্তাইন সিভিল সোসাইটি। তাদের অভিযোগ—এই প্রস্তাব দখলকে স্বাভাবিক করে, ইসরায়েলকে গণহত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়, এবং প্যালেস্তাইনের  জনগণের সম্মতি ছাড়াই তাদের ওপর “নতুন বিদেশি শাসনব্যবস্থা” চাপিয়ে দিতে চায়।
প্যালেস্তাইন NGO নেটওয়ার্ক PNGO ও মানবাধিকার সংগঠন PHROC এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, এই প্রস্তাব প্যালেস্তাইনেই স্ব-নির্ধারণ অধিকারকে সরাসরি অস্বীকার করেছে। তাদের ভাষায়, এটি “প্যালেস্তাইনের  জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি পরিকল্পনা”, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রস্তাবের কেন্দ্রে রয়েছে “বোর্ড অব পিস” (Board of Peace বা BoP), যার নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বোর্ড গাজার অর্থনীতি, অভিবাসন, বেসামরিক প্রশাসন, পুনর্গঠন—প্রায় সমস্ত ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করবে। প্যালেস্তাইনের  সংগঠনগুলোর দাবি, এতে সামান্য প্যালেস্তাইন অংশগ্রহণ রাখা হলেও তার কোনো বাস্তব অর্থ নেই—বোর্ডটি মূলত একটি বিদেশি কর্তৃত্ব, যার কাছে কোনও  জবাবদিহি নেই, এবং যার কাঠামো গাজাকে দীর্ঘমেয়াদে বাহ্যিক শাসনের অধীনস্থ করে ফেলবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে কিছু সন্দেহজনক দাতব্য সংস্থা, যেমন Gaza Humanitarian Foundation (GHF), যাদের অতীত ভূমিকা ইসরায়েলি দখলদার নীতিকে সমর্থন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনগুলো মনে করছে, BoP তৈরি করা হচ্ছে এমন সব আন্তর্জাতিক শক্তি ও কর্পোরেট নানা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করার জন্য, যারা গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সেবার নামে প্যালেস্তাইনের  সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে।

প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে International Stabilization Force (ISF) নামের একটি নতুন বাহিনী—যার কাজ হবে গাজাকে “ডিমিলিটারাইজড” অঞ্চলে পরিণত করা। কিন্তু প্যালেস্তাইনের  সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই বাহিনীর কোনও  আইনগত ভিত্তি নেই এবং এটি কার্যত এক নতুন দখলদার বাহিনী হিসেবেই কাজ করবে। তারা আরও সতর্ক করেছে যে ISF স্থানীয় কিছু মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে—যা গাজায় দমনমূলক নিরাপত্তা পরিবেশকে আরও কঠোর করবে।

প্যালেস্তাইনের  মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। অথচ UNSC প্রস্তাবে এই লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনও  ব্যবস্থা নেই, যা স্পষ্টতই প্রস্তাবটির ভণ্ডামি এবং পক্ষপাতের পরিচয় দেয়।

জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলি। তারা বলছে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘ নিজেকে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অপরাধে, বিশেষ করে গাজায় গণহত্যার দায়ে, “সহযোগী” করে তুলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে—“এটি জাতিসংঘ সনদের মূল মানবাধিকারের চেতনাকে অপমান করে এবং প্যালেস্তাইনের  প্রতি জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্বকে লঙ্ঘন করে।”

অর্থনৈতিক দিক নিয়েও কঠোর আপত্তি তুলেছে সংগঠনগুলো। প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে গাজায় পুনর্গঠনে যুক্ত করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তাদের মতে সেটি গাজাকে আবারও ঋণের ফাঁদে টেনে নিয়ে যাবে। বিদেশি সংস্থাগুলোর হাতে গাজার প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনীতি ছেড়ে দেওয়া হলে প্যালেস্তাইনের মানুষ  তাদের নিজস্ব সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে। বিশেষ করে গাজার উপকূলে থাকা অপরিশোধিত গ্যাস ও সামুদ্রিক সম্পদ—যা নিয়ে তারা আশঙ্কা করছে নতুন করে আন্তর্জাতিক কর্পোরেট লুট শুরু হতে পারে।

পরিশেষে সংগঠনগুলি বিশ্ব সম্প্রদায়—বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো—কে সতর্ক করে বলেছে, UNSC-র এই “ভয়াবহ ব্যর্থতা”-র পর আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে এসে প্যালেস্তাইনের  স্ব-নির্ধারণ অধিকারের প্রতি সমর্থন জানাতে হবে। তাদের মতে, এই প্রস্তাব শুধু গাজার ওপর নতুন দখল চাপানোর ঝুঁকি তৈরি করছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করছে।