প্রয়াত বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। সোমবার, ২৪ নভেম্বর, মুম্বইয়ে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। চলতি মাসের শুরুতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
2
9
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘হি-ম্যান’ নামে পরিচিত এই সুপারস্টার ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে রাজত্ব করেছেন। তাঁর শেষ পর্দা-প্রদর্শন হবে ‘ইক্কিস’ ছবিতে, যা মুক্তি পেতে চলেছে আগামী ২৫ ডিসেম্বর। অভিনয়জগতে তাঁর অদম্য যাত্রা, অসংখ্য হিট ছবি, এবং আলাদা করে বলার মতো ব্যক্তিত্ব তাঁকে ভারতীয় দর্শকের কাছে এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
3
9
ধর্মেন্দ্র রেখে গেলেন স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং অভিনেত্রী হেমা মালিনিকে। এছাড়া তাঁর ছয় সন্তান— সানি দেওল, ববি দেওল, ঈশা দেওল, আহানা দেওল, অজীতা ও বিজেতা— সকলে চলচ্চিত্র বা শিল্পজগতের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের পরিজনদের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
4
9
১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন ধর্মেন্দ্র। পরপর সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করে দ্রুতই দর্শকের প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তীব্র অ্যাকশন, রোমান্স কিংবা নিখাদ কমেডি— যে ভূমিকাতেই তিনি অভিনয় করেছেন, দর্শক তাঁকে সানন্দে গ্রহণ করেছেন। তাঁর কৃতিত্বের মুকুটে একটি বড় পালক যুক্ত হয় ২০১২ সালে, যখন ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে।
5
9
তাঁর কর্মজীবনে ‘শোলে’, ‘যাদোঁ কি বারাত’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘নৌকর বিবি কা’, ‘ফুল অউর পাথর’, ‘সত্যকাম’, ‘আয়ি মিলন কি বেলা’, ‘আয়ে দিন বহার কে’, ‘অঙ্খেন’, ‘জীবন-মৃত্যু’, ‘জুগনু’, ‘ধর্ম বীর’, ‘আযাদ’, ‘ঘাযব’, ‘লোহা’, ‘হুকুমত’ এবং পরবর্তীতে ‘অপনে’— প্রত্যেকটি ছবিই তাঁর যাত্রাপথে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে।
6
9
শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজনাতেও তিনি সমান কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাঁর প্রযোজিত ‘ঘায়েল’ ছবিটি, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন পুত্র সানি দেওল, জাতীয় পুরস্কার জিতেছিল ‘উত্তম জনপ্রিয় বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র’ বিভাগে। অভিনয়ের জন্যও একাধিকবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান ধর্মেন্দ্র— বিশেষত ‘ফুল অউর পাথর’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘যাদোঁ কি বারাত’, ‘রেশম কি দোরি’ ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিল।
7
9
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানার কাছে জন্ম ধর্মেন্দ্রের। মূল নাম ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষাণ দেওল। মাত্র ১৯ বছর বয়সে, ১৯৫৪ সালে, তিনি বিয়ে করেন প্রকাশ কৌরকে। পরবর্তীতে অভিনয়জগতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তাঁর জীবনে আসেন অভিনেত্রী হেমা মালিনি, যাঁর সঙ্গে তিনি বিয়ে করেন এবং গড়ে ওঠে নতুন পরিবার।
8
9
জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ধর্মেন্দ্র সক্রিয় ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি প্রায়ই নিজের খামারে কাজ করার ভিডিও, ট্র্যাক্টর চালানো, গাছপালা পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সরল জীবনদর্শনের বার্তা ভাগ করতেন ভক্তদের সঙ্গে। তাঁর আন্তরিকতা ও সরলতা তাকে ভক্তদের কাছে আরও প্রিয় করে তোলে। ২০২৪ সালে শাহিদ কাপুর ও কৃতি স্যানন অভিনীত ‘তেরি বাতোঁ মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ ছবিতেও তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা দেন।
9
9
বলিউড এক প্রজন্ম-প্রভাবিত তারকাকে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, সহকর্মী, রাজনৈতিক মহল ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভক্ত গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। ধর্মেন্দ্রের জীবনযাপন, কাজ এবং মানুষের প্রতি তাঁর আন্তরিক ভালোবাসা আগামী দীর্ঘ সময় ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।