আজকাল ওয়েবডেস্ক: আপনি কি কখনও ভেবেছেন, একজন মানুষ যখন মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন ঠিক কী ঘটে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষের শরীর ও মস্তিষ্ক এমন কিছু অদ্ভুত ও তীব্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, যা জীবন ও মৃত্যুর সীমানাকে অস্পষ্ট করে দেয়।


গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া বহু মানুষ এমন কিছু অভিজ্ঞতা জানান যা সাধারণ চেতনার সীমা অতিক্রম করে। তারা বলেন, যেন নিজেদের দেহের বাইরে ভাসছেন, অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে একটি উজ্জ্বল আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, অথবা এক ধরনের গভীর শান্তি ও প্রশান্তি অনুভব করছেন।


এই ঘটনাগুলোকে সাধারণভাবে “Near-Death Experience” বা সংক্ষেপে NDE বলা হয়— অর্থাৎ মৃত্যুর নিকটবর্তী অবস্থায় প্রাপ্ত চেতনার অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় অভিজ্ঞতাগুলি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা চালান। তারা মোট ১৬৭ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন, যারা দাবি করেন যে তারা এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন এবং পরে বেঁচে ফিরেছেন।

আরও পড়ুন:  দীপাবলিতে কেন সোনার দামে এতটা হেরফের হয়, কারণ জানলে অবাক হবেন


গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ধরনের অভিজ্ঞতা একজন মানুষের জীবনে স্থায়ী ছাপ ফেলে যায়। গবেষণায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে আসার অভিজ্ঞতার পর তাদের ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা মৃত্যুভয় হারিয়েছেন; জীবনের প্রতি আরও গভীর কৃতজ্ঞতা ও অর্থবোধ তৈরি হয়েছে।


এছাড়াও, প্রায় ৬৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান যে তারা অভিজ্ঞতার পর পেশাদার কাউন্সেলিং বা আধ্যাত্মিক সহায়তা চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বলেছেন, এই সহায়তা তাদের মানসিক ভারসাম্য ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে অত্যন্ত সহায়ক ছিল। তবে অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, সমাজে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাদের এই অভিজ্ঞতাকে বোঝার মতো মানুষ খুব কম।


গবেষক মারিয়েটা পেলিভানোভা বলেন, “এই রোগীদের সহায়তা করার উপায় ও তাদের বিশেষ চাহিদা নিয়ে গবেষণা এখনও খুব সীমিত। আমরা আশা করি এই ফাঁক পূরণের প্রচেষ্টা শুরু হবে, এবং চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নগুলির প্রতি আরও সময় ও মনোযোগ দেবেন।”


তিনি আরও জানান, মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা অভিজ্ঞতা শুধু শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া নয়, বরং গভীর মানসিক ও আত্মিক প্রভাবও সৃষ্টি করে। এটি অনেক সময় মানুষকে নতুনভাবে জীবন বুঝতে, সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে ও নিজের উদ্দেশ্য পুনর্বিবেচনা করতে উদ্বুদ্ধ করে।


যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কেন এবং কীভাবে এই অভিজ্ঞতাগুলি ঘটে, তবে ধারণা করা হয় যে মৃত্যুর মুহূর্তে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি, স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়ার পরিবর্তন বা চরম মানসিক চাপ এই ধরনের ভ্রমণসদৃশ চেতনা তৈরি করতে পারে।অন্যদিকে, অনেকেই মনে করেন এটি শুধু জৈবিক নয় বরং আত্মার অস্তিত্ব ও মৃত্যুর পর চেতনার ধারাবাহিকতার প্রমাণ।


এই গবেষণা মৃত্যুর রহস্য নিয়ে মানবজাতির অনুসন্ধানে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। মৃত্যুর মুখোমুখি গিয়ে ফিরে আসা মানুষদের অভিজ্ঞতা হয়তো আমাদের শেখায়, জীবন ও মৃত্যু একে অপরের বিপরীত নয়, বরং একই যাত্রার দুটি ধাপ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের মূল্য কেবল বেঁচে থাকার মধ্যেই নয়, বরং তার প্রতিটি মুহূর্তে অর্থ ও শান্তি খুঁজে পাওয়ার মধ্যেও নিহিত।