ছোট উপহার হিসেবে সোনার কয়েন থেকে শুরু করে জমকালো গয়না কেনা পর্যন্ত — সোনা আমাদের উৎসব ও সঞ্চয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এর আকর্ষণ কেবল সংস্কৃতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সোনা হলো এক নিরাপদ বিনিয়োগ সম্পদ এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে এক নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা। কিন্তু প্রশ্ন হল আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে কতটা সোনা যথাযথ?
2
14
এই দীপাবলিতে, প্রশ্ন সোনা কিনবেন কি না — তা নয়, বরং কীভাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কিনবেন যাতে তা উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎও মজবুত করে।
3
14
ভারতে ধনতেরাস ও দীপাবলিতে সোনা কেনাকে শুভ মনে করা হয়, কারণ এটি সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক। পরিবারগুলো প্রায়ই গয়না, কয়েন বা বার কেনেন সম্পদের প্রতীক হিসেবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কেনাকাটা আবেগপ্রসূত, কৌশলগত নয়।
4
14
উদাহরণস্বরূপ, ৫০,০০০ টাকার সোনার গয়না কিনে তা খুব কম ব্যবহার করলে সেই অর্থ এমন জায়গায় আটকে থাকে, যা অন্য বিনিয়োগে আরও ভালো মুনাফা দিতে পারত। এর মানে এই নয় যে সোনা কিনবেন না, বরং আবেগ ও বাস্তবতা — দুটোই মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, যাতে প্রতিটি উৎসবের কেনাকাটা আপনার সামগ্রিক আর্থিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
5
14
সোনার গুরুত্ব শুধু আবেগে নয়, অর্থনীতিতেও। এটি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে এক শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। যখন শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, তখন সোনার দাম প্রায়ই বেড়ে যায়। যেমন ২০২০ সালের মহামারির সময়, যখন বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার ধসে পড়ে, তখন সোনার দাম উল্টো বেড়ে যায়।
6
14
তবে সোনা থেকে লভ্যাংশ বা সুদের মতো নিয়মিত আয় হয় না। এর প্রধান মূল্য হল স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা, আক্রমণাত্মক বৃদ্ধি নয়। তাই এটি মূল বিনিয়োগ নয়, বরং পোর্টফোলিওর ভারসাম্য রক্ষার জন্য উপযুক্ত। উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সোনাকে আপনার ইকুইটি বা স্থায়ী আয়ের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যাতে বাজারের অস্থিরতার সময় তা আপনার পোর্টফোলিওকে রক্ষা করতে পারে।
7
14
সফল বিনিয়োগের মূলমন্ত্র হল বৈচিত্র্য। তাই সোনাকে একটি কৌশলগত বৈচিত্র হিসেবে দেখুন, মূল বিনিয়োগ নয়। সাধারণভাবে, আপনার মোট পোর্টফোলিওর ৫–১০ শতাংশের বেশি সোনা হওয়া উচিত নয়।
8
14
তবে এটি নির্ভর করবে আপনার বয়স, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং আর্থিক লক্ষ্য-এর উপর। যেমন একজন ৩০ বছর বয়সী বিনিয়োগকারী, যার দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি বিনিয়োগ বেশি, তিনি ৫% সোনা রাখলেই যথেষ্ট।
9
14
অন্যদিকে, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যার লক্ষ্য মূলধন সংরক্ষণ, তিনি ১০–১৫% পর্যন্ত সোনা রাখতে পারেন। সঠিক ভারসাম্য আপনাকে স্থিতিশীলতা দেবে, আবার প্রবৃদ্ধির সুযোগও হারাবে না।
10
14
যদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনা কিনতে চান, তবে শুধু গয়নার দিকে না তাকিয়ে ডিজিটাল ও আর্থিক বিকল্পগুলোও বিবেচনা করুন।
11
14
Sovereign Gold Bonds (SGBs) – ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) দ্বারা ইস্যু করা এই বন্ড বছরে ২.৫% সুদ দেয়, তার সঙ্গে মূলধনের মূল্যবৃদ্ধিও হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ। যদিও বর্তমানে নতুন ইস্যু নাও খোলা থাকতে পারে, আপনি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কিনতে পারেন।
12
14
Gold ETFs (Exchange Traded Funds) – এগুলো সহজে শেয়ারের মতোই কেনাবেচা করা যায় এবং তরলতা (liquidity) বেশি।
13
14
ডিজিটাল গোল্ড – নিরাপদ, খরচ কম এবং সংরক্ষণের ঝুঁকি নেই।
14
14
শারীরিক সোনার আবেগীয় মূল্য অনেক, তবে ডিজিটাল বা কাগজভিত্তিক সোনায় বিনিয়োগ নিরাপদ, কার্যকরী এবং আর্থিকভাবে বেশি বুদ্ধিদীপ্ত হতে পারে।