আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালে এক অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে তীব্র বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, শাসনব্যবস্থার প্রতি অসন্তোষ, বেকারত্ব এবং অনিশ্চয়তার পরিবেশ এই আন্দোলনকে আরও বিস্ফোরক করে তোলে।

রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত ও নিহত হয়। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে যায়। সরকারি ভবন, যানবাহন এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোতে আগুন লাগানো হয়। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি বলে জানানো হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলী পদত্যাগ করেন। পরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও নিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে তাঁর শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে নেপাল প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল।

আরও পড়ুন: নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাঁচটা থিসিস 

নতুন প্রশাসন একটি অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবে, যার মধ্যে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। মার্চ ২০২৬-এ ভোট আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। তবে বিরোধী পক্ষ সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, কারণ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির রাজনৈতিক পদ গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

তরুণদের আন্দোলন এখন শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার হলেও, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—শান্তি ফিরিয়ে আনা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক আস্থা পুনর্গঠন করা।

প্রসঙ্গত, নেপালের বিচার বিভাগের একজন নির্ভীক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত সুশীলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর এক বছর দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালে তিনি দেশের কিছু মন্ত্রী এবং শক্তিশালী আমলাদের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেছেন।

তবে সুশীলার জীবনের একটি আকর্ষণীয় দিক হল তাঁর স্বামী দুর্গাপ্রসাদ সুবেদির অতীত। দূর্গাপ্রসাদই নেপালের প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই বিমানটিতে বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী মালা সিনহাও ছিলেন। সুবেদি নেপালি কংগ্রেসের একজন যুব নেতা ছিলেন।

বারাণসীর বিএইচইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রী সুশীলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং বিচারবিভাগীয় সংস্কারের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে জেন-জির সহিংস বিক্ষোভের পর নেপাল একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন সুশীলা যদি অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তাঁকে আবারও নির্ভীকতা প্রদর্শন করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সুশীলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রায় ছিল তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী জয়প্রকাশ গুপ্তকে পদে থাকাকালীন কারাদণ্ড দেওয়া। নেপালের ইতিহাসে যা প্রথম। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে তিনি দুর্নীতি দমন ব্যুরোর প্রধান লোকমান সিং কার্কিকে অপসারণ করেন। যার ফলে লোকমান কানাডায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন।