আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাসা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এক প্রায় অদৃশ্য স্তরকে ঘিরে নতুন মহাকাশ অভিযান শুরু করতে চলেছে। এই স্তরটির নাম জিওকরোনা যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বহিরাংশ তথা এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃস্তরের অংশ। সাধারণ চোখে দেখা যায় না এই বিশাল হাইড্রোজেন মেঘ, তবে সূর্যের অতিবেগুনি আলো প্রতিফলিত করে এটি একপ্রকার “অদৃশ্য হালো” তৈরি করে।


এই রহস্যময় স্তরকে আরও ভালোভাবে জানতেই নাসা উৎক্ষেপণ করছে ক্যারাদার্স জিওকরোনা অবজারভেটরি। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এটি পৃথিবীকে ঘিরে থাকা অতিবেগুনি হাইড্রোজেন আলোর ছবি তুলবে এবং সূর্যের প্রভাবে সেটি কীভাবে বদলায় তা বিশ্লেষণ করবে। গবেষকদের মতে, জিওকরোনার গতিবিধি বোঝা গেলে মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক বেশি নির্ভুল হবে। যা ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযান কিংবা মঙ্গল অভিযানে নভোচারীদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন: জিএসটি কমলেও দাম কেন কমছে না? এই নম্বরে অভিযোগ করলেই মিলবে সমাধান


জিওকরোনার অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে ১৯৭২ সালে। সেবার অ্যাপোলো ১৬ মিশনের নভোচারীরা চাঁদে একটি বিশেষ আল্ট্রাভায়োলেট ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন। এটি তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানী ড. জর্জ ক্যারাদার্স। সেই ক্যামেরায় পৃথিবীর চারপাশে বিশাল হাইড্রোজেন মেঘ ধরা পড়ে, যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে।


এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারের স্মরণে নতুন মিশনের নামকরণ হয়েছে ড. ক্যারাদার্সের নামে। এবারে লক্ষ্য আরও বড়। পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ লক্ষ মাইল দূরে, সূর্যের দিকে অবস্থিত ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট-১ থেকে অবিচ্ছিন্নভাবে এই স্তরের ছবি পাঠাবে ক্যারাদার্স অবজারভেটরি।


২০২৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটে চেপে মহাকাশে উড়বে ক্যারাদার্স অবজারভেটরি। একইসঙ্গে যাত্রা করবে নাসার ইন্টারস্টেলার ম্যাপিং অ্যান্ড অ্যাক্সিলারেশন প্রোব এবং মার্কিন আবহাওয়া সংস্থার স্যাটেলাইট। প্রায় চার মাসের ভ্রমণের পর যানটি পৌঁছবে এল-১ কক্ষে। এরপর আরও এক মাস ধরে চলবে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালের মার্চ থেকে শুরু হবে অবজারভেটরির প্রাথমিক দুই বছরের বিজ্ঞান মিশন।


এই পর্যবেক্ষণাগারে থাকবে দুটি উন্নত আল্ট্রাভায়োলেট ক্যামেরা। একটি নিয়ার-ফিল্ড ইমেজার ও অপরটি ওয়াইড-ফিল্ড ইমেজার। এর সাহায্যে পৃথিবীর চারপাশে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ও বিস্তার মানচিত্রায়ন করা হবে। সূর্যের ঝড়, করোনা ম্যাস ইজেকশন ইত্যাদি মহাজাগতিক ঘটনায় জিওকরোনা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তাও ধরা পড়বে। গবেষকরা আশা করছেন, এই তথ্য থেকে জানা যাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কতটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় মহাকাশ পরিবেশে, এবং কেন পৃথিবী তার জলের ভাণ্ডার ধরে রাখতে পেরেছে অথচ মঙ্গল বা শুক্র তা পারেনি।


শুধু পৃথিবী নয়, এই মিশন দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটগুলির বায়ুমণ্ডল বোঝার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে। জিওকরোনার মতো প্রক্রিয়া অন্য গ্রহেও ঘটতে পারে। ফলে জীবনোপযোগী জগৎ খোঁজার অভিযানে নতুন সূত্র দেবে এই পর্যবেক্ষণ। একইসঙ্গে স্যাটেলাইট ও মহাকাশযানের সুরক্ষার জন্যও এটি হবে এক অপরিহার্য হাতিয়ার।


নাসার ক্যারাদার্স জিওকরোনা অবজারভেটরি শুধু একটি বৈজ্ঞানিক মিশন নয়, বরং পৃথিবীর চারপাশে অদৃশ্য অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঢালকে চেনার এক নতুন জানালা। মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের সুরক্ষা এবং দূর গ্রহে প্রাণ খোঁজার সম্ভাবনাই নির্ভর করছে এই ধরনের উদ্ভাবনী পদক্ষেপের ওপর।