আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৌতূহল থেকেই শুরু, শেষ পর্যন্ত প্রেগন্যান্সি টেস্টেই ধরা পড়ল প্রাণঘাতী ক্যান্সার! ১৮ বছর বয়সি তাইওয়ানের এক কিশোরের জীবনে ঘটল এমনই এক অভূতপূর্ব ঘটনা। প্রেমিকার প্রেগন্যান্সি কিটে নিজের প্রস্রাব পরীক্ষা করে তিনি বুঝতেই পারেননি, এক অলক্ষ্য বিপদ তাঁকে গ্রাস করে ফেলেছে। কিটে যখন দুইটি লাল রেখা ফুটে ওঠে, তখন তিনি প্রথমে হতচকিত হয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায়—তিনি টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়েছেন তাইওয়ানের চিকিৎসক লু জিনহেং। তিনি জানান, এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্তদের শরীরে "Human Chorionic Gonadotropin" (HCG) হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা সাধারণত গর্ভবতী নারীদের শরীরে তৈরি হয়। ফলে সেই কিশোরের প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ডাক্তারদের মতে, বিশেষ করে "Choriocarcinoma" নামক অণ্ডকোষের ক্যান্সারে এই হরমোন ক্ষরণ বেশি হয়। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাতেও একই দাবি করা হয়েছিল। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ টেস্টিকুলার ক্যান্সার আক্রান্ত পুরুষের শরীরে HCG হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তবে শুধুমাত্র প্রেগন্যান্সি কিট পজিটিভ হলেই ক্যান্সার নির্ধারণ সম্ভব নয়। চিকিৎসক জিনহেং জানান, পেটের নীচে যন্ত্রণা, অণ্ডকোষে ফোলা, ডেলা মতো গাঁট তৈরি হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, এমনকি বুকে অস্বাভাবিক ভার অনুভব—এসবই টেস্টিকুলার ক্যান্সারের সম্ভাব্য উপসর্গ।
আরও পড়ুন: খালি পেটে লেবু জল: আদৌ কি সবার জন্য উপকারী? কী বলছেন চিকিৎসকরা জেনে নিন
এই রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকরা সাধারণত করেন টেস্টিকুলার পালপেশন, আলট্রাসাউন্ড এবং রক্তে HCG মাত্রা পরীক্ষা। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় র্যাডিক্যাল অর্কিএক্টোমি (অণ্ডকোষ অপসারণ) এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার। তবে সময়মতো ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, সব সময় পজিটিভ প্রেগন্যান্সি টেস্ট মানেই ক্যান্সার নয়। এমনকি কিছু নির্দিষ্ট ফল—যেমন কিউয়ি, আনারস, লেবু ইত্যাদি বেশি খেলে বা প্রস্রাবে প্রোটিন বা রক্তের উপস্থিতিতেও ফলাফল ভুল হতে পারে। তা সত্ত্বেও, কোনও পুরুষ যদি মজার ছলেই প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করেন এবং তাতে দুটি রেখা দেখা যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়।
তাইওয়ানের ওই কিশোর, যিনি এই পরীক্ষার ঠিক একদিন পরই নিজের এ লেভেলের ফলাফল জানার কথা ছিল, বলেন—“সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। একটা গর্ভবতী মহিলার মতো আমার শরীরেও কিছু একটা বাড়ছিল! মনে হচ্ছিল কোনো তথ্যচিত্রে চলে যাচ্ছি।” বাস্তবই যে সিনেমার থেকেও অদ্ভুত হতে পারে, তার জীবনের অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কখনও কখনও নিছক কৌতূহলই জীবন বাঁচাতে পারে।
