আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে। সেদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তদন্তে ব়্যাব ১০ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু, তদন্ত চলাকালীনই সামনে এল একটি অদ্ভূত বিষয়। জানা গিয়েছে, দীপুর ধর্মীয় অবমাননাকর মন্তব্যের কোনও সাক্ষী বা সরাসরি প্রমাণ নেই!
২৫ বছর বয়সী দীপু চন্দ্র দাসকে ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি পোশাক কারখানার বাইরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ওই কারখানাতেই কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর তাঁর মৃতদেহ একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং একদল জনতা সেই নৃশংস ঘটনার ভিডিও তুলতে তুলতে 'উগ্র' স্লোগান দিতে থাকে।
বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্য কমান্ডার শামসুজ্জামান 'দ্য ডেইলি স্টার' পত্রিকাকে জানিয়েছেন, দীপু চন্দ্র দাস ফেসবুকে এমন কিছু লিখেছিলেন যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার মতো, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ব়্যাব সদস্য শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পোশাক কারখানায় দীপুর সহকর্মীরাও ধর্মীয় অবমাননার কোনও কার্যকলাপের কথা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, "এখন সবাই বলছে যে তারা ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে এ ধরনের কিছু বলতে শোনেনি। এমন কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি নিজে ধর্মীয় অবমাননার কিছু শুনেছেন বা দেখেছেন বলে দাবি করছেন।"
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, নবী মুহম্মদকে নিয়ে দীপু চন্দ্র দাস অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে কারখানার শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন 'প্রথম আলো' পত্রিকাকে বলেছেন, "শ্রমিকরা দাবি করে যে, দীপু চন্দ্র দাসকে বরখাস্ত করতে হবে। এরপরই কারখানার বাইরে একটি জনতা জড়ো হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দীপু চন্দ্র দাসকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর ছিল। এরপর জনতা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে।"
কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার আরও জানান যে, শুক্রবার রাতে যখন জনতা কারখানাটি ঘিরে ফেলে এবং পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে, তখন প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করার জন্য দাসকে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। জনতা প্রথমে লাঠি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে দীপুকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ডিভাইডারের ওপর একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই অমানবিক দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গণপিটুনির ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে- অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হবে না। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের হিংসার কোনও স্থান নেই বলেও সতর্ক করেছে মহম্মদ ইউনূসের কার্যালয়।
