আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কনিষ্ঠ পুত্র কাসিম খান সোশ্যাল মিডিয়ায় এক তীব্র ও আবেগঘন পোস্টে অভিযোগ করেছেন যে তাঁর বাবাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের প্রতিটি পথ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এক্স-এ তাঁর পোস্টে কাসিম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পরিবার কোনওভাবেই জানতে পারছে না ইমরান খান আদৌ নিরাপদ আছেন কি না। তিনি সতর্ক করে বলেন, তাঁর বাবার নিরাপত্তা নিয়ে যে কোনও বিপদজনক পরিস্থিতির দায় পাকিস্তান সরকারেরই নিতে হবে।
কাসিম, যিনি বেশিরভাগ সময় পাকিস্তানের বাইরে কাটান এবং সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত নন, জানান যে ইমরান খান টানা ৮৪৫ দিন ধরে কারাবন্দি। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের সেলে একাকী আটকে রাখা হয়েছে। “আমার বাবা ৮৪৫ দিন ধরে গ্রেফতার অবস্থায় আছেন। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাঁকে একটি ডেথ সেলে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে,”— লিখেছেন তিনি।
ইমরান খান, যিনি ক্রিকেট তারকা থেকে পাকিস্তানের প্রধান রাজনীতিক হয়ে ওঠেন, বর্তমানে একাধিক মামলার সাজা ভোগ করছেন। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর দাবি, এই মামলাগুলি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। লন্ডনে বেড়ে ওঠা কাসিম ও সুলায়মান সাধারণত পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন না। কিন্তু পরিবারের প্রতি সরকারের এই আচরণে কাসিম ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, গত এক মাস ধরে সরকারের একটি ‘অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা’র কারণে তাঁরা বাবার সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
কাসিমের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ইমরানের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। “তাঁর বোনদের একবারও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কোনও ফোন কল নেই, কোনও সাক্ষাৎ নেই, তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণও নেই,”— উল্লেখ করেন তিনি। “আমি ও আমার ভাইও বাবার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারিনি।”
তিনি দাবি করেন, এই ‘ব্ল্যাকআউট’ আদৌ নিরাপত্তাজনিত নয়—বরং ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবারের কাছ থেকে ইমরানের বাস্তব পরিস্থিতি গোপন করার চেষ্টা। “এটি কোনও নিরাপত্তা প্রটোকল নয়। বরং আমার বাবার অবস্থা আড়াল করার এক পরিকল্পিত প্রয়াস।”
কাসিম আরও বলেন, “আমার বাবার নিরাপত্তা নিয়ে যেকোনো ঘটনার জন্য পাকিস্তান সরকার ও তার ‘হ্যান্ডলাররাই’ আইনি, নৈতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দায়ী থাকবেন।”
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তৎপর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি। “আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, গণতান্ত্রিক দেশ ও বিশ্বের অন্য সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করছি—অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুন। তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণ চাইুন, আদালত-নির্দেশিত সাক্ষাৎ নিশ্চিত করুন এবং এই অমানবিক একাকী বন্দিত্ব শেষ করুন।”
এদিকে বিক্ষোভ শেষে, কারাগার কর্তৃপক্ষ ইমরানের বোন আলিমা খানকে জানিয়েছে যে তাঁকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল, যেখানে ইমরান আটকে আছেন, পাকিস্তানের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার হিসেবে পরিচিত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং বিপজ্জনক অপরাধীদের রাখার জন্য পরিচিত এই জেল নিয়ে ইমরান সমর্থকদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জোর দিয়ে জানিয়েছে, ইমরান খানকে কোথাও সরানো হয়নি এবং তিনি সুস্থ আছেন। জেল প্রশাসন জিও নিউজকে বলেছে, “তাঁকে নিয়ে ছড়ানো গুজব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি জেলের মধ্যেই আছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন।”
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও দাবি করেছেন, ইমরান খান ‘সাধারণ বন্দিদের তুলনায় অনেক উন্নত সুবিধা পাচ্ছেন’। তাঁর কথায়, ইমরানের জন্য এমন খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে “যা নাকি পাঁচ তারকা হোটেলেও পাওয়া যায় না”—সঙ্গে আছে টেলিভিশন, ব্যায়াম সরঞ্জাম এবং ভেলভেটের গদি।
তবে পরিবারের অভিযোগ ও সরকারের বক্তব্য—দুইয়ের মধ্যে ফারাক যত বাড়ছে, ততই প্রশ্ন বাড়ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রকৃত অবস্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে।
