আজকাল ওয়েবডেস্ক: ড্রাইভিং লাইসেন্সে বয়স লেখা থাকে একরকম, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় ভিন্ন গল্প বলে। আধুনিক গবেষণা বলছে, এমআরআই স্ক্যান করে বোঝা সম্ভব আপনার মস্তিষ্ক কতটা তরুণ বা বয়স্ক দেখাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা-র একদল গবেষক এমনই এক সমীক্ষা চালিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন।
গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কিম্বারলি টি. সিবিলে, পিএইচডি। তিনি এবং তাঁর দল জানতে চেয়েছিলেন—প্রতিদিনের অভ্যাস এবং সামাজিক পরিবেশ কীভাবে মধ্যবয়সী ও প্রবীণ মানুষের মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধি বা কমার গতিকে প্রভাবিত করে।
তাঁরা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করে প্রকৃত বয়সের সঙ্গে তুলনা করেন। এই পার্থক্যকে বলা হয় “ব্রেন এজ গ্যাপ”, যা গোটা মস্তিষ্কের সুস্থতার এক ধরনের সূচক। বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় ডিপব্রেননেট নামের মেশিন লার্নিং মডেল, যা আগেও ব্যথা ও কর্মক্ষমতার সঙ্গে মস্তিষ্কের বয়স অনুমানের যোগসূত্র দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন: কলম্বিয়ায় ছাত্রদের সামনে গণতন্ত্র নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধী
এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন মধ্যবয়সী ও প্রবীণ প্রাপ্তবয়স্করা, যাঁদের অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী হাঁটুর ব্যথায় ভুগছিলেন বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিতে ছিলেন। দেখা গেল, যাঁরা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বেশি অনুসরণ করেন, তাঁদের মস্তিষ্ক প্রকৃত বয়সের তুলনায় গড়ে আট বছর তরুণ দেখাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, পরবর্তী দুই বছরে তাঁদের মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার হারও তুলনামূলকভাবে ধীর ছিল।
অন্যদিকে, নিম্ন আয় ও কম শিক্ষার মতো সামাজিক ঝুঁকি ফ্যাক্টরগুলো গবেষণার শুরুতে মস্তিষ্ককে বেশি বয়স্ক দেখাচ্ছিল। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সুফল স্পষ্টভাবে বজায় থেকেছে।
সিবিলে বলেন, “আমাদের গবেষণার বার্তা স্পষ্ট—স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা শুধু ব্যথা কমায় বা শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়ায় না, বরং তা সার্বিক স্বাস্থ্যকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তিশালী করে।”
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যাঁদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক ঝুঁকি বেশি, তাঁদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে গড়ে তিন বছর বয়স্ক দেখায়। অন্যদিকে, ঘুমের মান এখানে অন্যতম সুরক্ষামূলক অভ্যাস হিসেবে উঠে এসেছে। প্রমাণ রয়েছে যে ঘুমের অভাব সামান্য চাপও সহ্য করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিদ্রাহীনতা শুধুই ক্লান্তি বাড়ায় না, বরং মানসিক চাপ ও মস্তিষ্কের বার্ধক্যকেও ত্বরান্বিত করে। এই কারণে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপিকে প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে সুপারিশ করেছে।
এছাড়াও, আশাবাদী মানসিকতা ও সামাজিক সহায়তাও মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আশাবাদ ভালো ঘুম নিশ্চিত করে, চাপ কমায়, আর প্রিয়জন বা বন্ধুদের সহায়তা থাকলে তা কেবল মানসিক স্বস্তিই দেয় না, বরং গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অতীতের গবেষণা দেখিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা প্রবীণদের মস্তিষ্ককে বয়স্ক করে তোলে। নতুন গবেষণা তার ওপর নতুন মাত্রা যোগ করেছে—এবার স্পষ্ট হল, সঠিক জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এই অতিরিক্ত বোঝা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।
অতএব, বার্তা একটাই—মস্তিষ্ক কেবল রোগ-ব্যাধির কারণে নয়, আমাদের জীবনধারা ও পরিবেশের প্রতিক্রিয়াতেও দ্রুত বা ধীরে বুড়ো হয়। তাই দৈনন্দিন অভ্যাসই নির্ধারণ করতে পারে, আপনার মস্তিষ্ক প্রকৃত বয়সের তুলনায় কতটা তরুণ থাকবে।
