আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রবি লক্ষ্মী চিত্রকরকে বিমানে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ‘জেন জি’ বিক্ষোভের সময় তিনি গুরুতরভাবে পুড়ে গিয়েছিলেন।

সহিংস বিক্ষোভের সময় যখন বাড়িতে আগুন লাগানো হয়, তখন রবি লক্ষ্মী চিত্রকর বাড়িতেই ছিলেন। ঘটনার সময় চিত্রকরের শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। ধোঁয়ায় তাঁর ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর বাঁ হাত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বুকেও সংক্রমণ হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তিনি কীর্তিপুরের বার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন, ডাক্তারদের পরামর্শে তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য নয়াদিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে।

জেন জি বিক্ষোভের সময় কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকায় খানালের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। খানাল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

আরও পড়ুন: মশা তৈরির কারখানা খুলল ব্রাজিলে, বছরে লক্ষ লক্ষ পতঙ্গ উৎপাদন হবে সেখানে, কী হবে এত মশা দিয়ে

কেপি শর্মা ওলির সরকার পতনের দিকে পরিচালিত ‘জেন জি’ বিক্ষোভে তিন পুলিশ কর্মীসহ কমপক্ষে ৭২ জন নিহত হন। নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি ৯ সেপ্টেম্বর নেপালে হিংসার ঘটনাকে ‘সংগঠিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এও জানিয়েছেন যে সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

‘জেন জি’ বিক্ষোভের তদন্তের জন্য সুশীলা সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। তদন্ত কমিশনের সদস্যরা হলেন প্রাক্তন বিচারপতি গৌরী বাহাদুর কারকি, প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ ইনস্পেক্টর জেনারেল বিজ্ঞান রান শর্মা এবং আইন বিশেষজ্ঞ বিশ্বেশ্বর প্রসাদ ভান্ডারি। তদন্ত কমিশনকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই মাসের শুরুতে নেপালে সহিংস বিক্ষোভ দেখা গেছে। প্রথমে ওলি সরকারের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তবে, সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরেও তা অব্যাহত ছিল, যার ফলে ওলি সরকারের পতন হয়। বিক্ষোভ চলাকালীন সংসদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সরকারি ভবন, রাজনৈতিক দলের অফিস এবং সিনিয়র নেতাদের বাড়ি সহ বেশ কয়েকটি ভবন ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

নেপালের তরুণ প্রজন্ম, যাদের জেন জি নামে অভিহিত করা হচ্ছে, মূলত দু’টি ইস্যুতে রাস্তায় নেমেছিল। এক, মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। দুই, রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

যুবসমাদের দাবি ছিল, এই নিষেধাজ্ঞা একদিকে তাদের রোজগারের পথ বন্ধ করছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের তথ্য আড়াল করার কৌশল। ফলে ক্ষোভ দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন, যানবাহন ও সম্পত্তি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

২০০৬ সালে রাজতন্ত্র পতনের পর থেকে নেপালে স্থায়ী সরকার টিকে নেই। কমিউনিস্ট দলগুলো (CPN, UML, মাওবাদী সেন্টার) সংসদে বড় ভূমিকা রাখলেও তাদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে জোটসর্বস্ব রাজনীতি ও আদর্শগত দ্বিধার কারণে জনগণের আস্থা হারিয়েছে। না করা হয়েছে সম্পদের জাতীয়করণ, না ভূমি সংস্কার। এর সুযোগ নিয়েছে নতুন প্রজন্মের পশ্চিম ঘেঁষা রাজনীতিকরা। একইসঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তির মদতে রাজতন্ত্রপন্থীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্লোগান তুলছে।