আজকাল ওয়েবডেস্ক: আন্টার্কটিকাকে ঘিরে থাকা দক্ষিণ মহাসাগর মানবসভ্যতার রোজকার কাজ থেকে অনেক দূরে হলেও পৃথিবীর জলবায়ুতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসাগর বায়ুমণ্ডল থেকে বিপুল পরিমাণ তাপ শোষণ করে বিশ্বের উষ্ণায়নের গতি শ্লথ করে দেয়। গবেষকদের মতে, এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া না থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও দ্রুত ও ভয়াবহ হারে বেড়ে যেত।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ মহাসাগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী ঝড় এই তাপ শোষণের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। ঝড়ের ফলে সমুদ্রের জলে যে গভীর মিশ্রণ ঘটে, তা অনেক জলবায়ু মডেলে এখনও পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
দক্ষিণ মহাসাগর আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর—এই তিনটি প্রধান মহাসাগরকে যুক্ত করে। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অবাধে জল চলাচল করে এবং সারা পৃথিবীতে তাপ ও কার্বন পরিবহন করে। এর ফলেই বিশ্বের তাপমাত্রার ভারসাম্য অনেকটাই বজায় থাকে।
গবেষণা অনুযায়ী, মানব কার্যকলাপের ফলে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপের ৭৫ শতাংশেরও বেশি শোষণ করে নেয় দক্ষিণ মহাসাগর। এই তাপ যদি বায়ুমণ্ডলে থেকে যেত, তবে বায়ুর তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যেত, বরফ গলন আরও দ্রুত হত এবং তাপপ্রবাহ আরও মারাত্মক রূপ নিত।
তাপ শোষণের ক্ষমতা অনেকটাই নির্ভর করে সমুদ্রপৃষ্ঠের অবস্থার ওপর। শান্ত জল ও ঝড়ো জলের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতদিন ঝড়ের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছে। অথচ ঝড়ের সময় প্রবল বাতাস সমুদ্রপৃষ্ঠকে নাড়িয়ে দেয় এবং সাধারণত আলাদা থাকা জলের স্তরগুলো ভেঙে দেয়। এর ফলে নিচের ঠান্ডা জল ওপরে উঠে আসে এবং ওপরের গরম জল নিচে নেমে যায়।
এই মিশ্রণের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ঠান্ডা হয়ে যায়, যা বায়ুমণ্ডল থেকে আরও বেশি তাপ শোষণ করতে সক্ষম হয়। গবেষণার প্রধান লেখক মার্সেল ডু প্লেসিস বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, যেসব গ্রীষ্মে ঝড়ের তীব্রতা বেশি থাকে, সেসব সময়ে দক্ষিণ মহাসাগরের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কম থাকে। ফলে শান্ত আবহাওয়ার তুলনায় ঝড়ো সমুদ্র বায়ুমণ্ডল থেকে বেশি তাপ গ্রহণ করতে পারে।”
এই প্রক্রিয়া জলবায়ু ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে—বায়ুর তাপমাত্রা, সমুদ্রের বরফের পরিমাণ এবং সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ সবই এর সঙ্গে যুক্ত। গবেষকরা কয়েক দশকের ঝড়ের ধরণ, বাতাসের গতি ও সমুদ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে এই অঞ্চলে ঝড় ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আন্টার্কটিকা ও উষ্ণমণ্ডলের মধ্যে চাপের পার্থক্য বাড়ার ফলেই বাতাসের গতি এবং ঝড়ের তীব্রতা বাড়ছে।
গবেষকদের মতে, জলবায়ু মডেলগুলোতে যদি ঝড়জনিত এই মিশ্রণ সঠিকভাবে ধরা না পড়ে, তবে ভবিষ্যৎ উষ্ণায়নের হিসাব ভুল হতে পারে। ডু প্লেসিসের কথায়, “ঝড়ের প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা না গেলে ভবিষ্যৎ জলবায়ু পূর্বাভাসে বড় ধরনের ত্রুটি থেকে যাবে।”
