আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীন আনুষ্ঠানিকভাবে তার সবচেয়ে আধুনিক বিমানবাহী রণতরী CNS Fujian-কে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা দেশটির শক্তি অর্জনের দৌড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সপ্তাহের শুরুতে হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত কমিশনিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ফুজিয়ানকে কার্যত “তিন-বিমানবাহী রণতরীর যুগ” সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন নৌ প্রতিযোগিতায় এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।


ফুজিয়ান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
বছরের পর বছর ধরে নির্মাণাধীন ফুজিয়ান এখন এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ-পরমাণু চালিত বিমানবাহী রণতরী। এটি চীনের প্রথম CATOBAR ব্যবস্থা–সজ্জিত জাহাজ, যেখানে পুরনো “ski-jump” ধাঁচের উড্ডয়ন পদ্ধতির পরিবর্তে উন্নত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট ব্যবহৃত হয়েছে। এর ফলে বিমানের ভারবহন ক্ষমতা, গতি ও যুদ্ধ-পরিসর বহুগুণ বেড়েছে।


সম্পূর্ণ দেশীয় নকশায় নির্মিত ফুজিয়ান
ফুজিয়ান হলো চীনা নৌবাহিনীর তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী এবং প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে ডিজাইন ও নির্মিত জাহাজ। এটি আকার, প্রযুক্তি ও সক্ষমতার দিক থেকে আগের দুই রণতরী লিয়াওনিং ও শানডং-কে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৮০,০০০ থেকে ৮৫,০০০ টন জলচাপ ক্ষমতা এবং ৩১৬ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই রণতরী বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে বিশাল সামরিক জাহাজ।


ভারী ও পূর্ণ-জ্বালানিযুক্ত বিমান উড্ডয়ন সক্ষমতা
ফুজিয়ানে রয়েছে তিনটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট, যা প্রযুক্তিগতভাবে মার্কিন নৌবাহিনীর EMALS সিস্টেমের অনুরূপ। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারী ও সম্পূর্ণ জ্বালানিযুক্ত যুদ্ধবিমান সহজেই উড্ডয়ন করতে পারে, যা মিশন ফ্লেক্সিবিলিটি রেট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। 


৫০টিরও বেশি বিমান বহনের সক্ষমতা
ফুজিয়ানের ফ্ল্যাট ডেক নকশা ও প্রশস্ত হ্যাঙ্গার স্পেস একে ৫০টিরও বেশি বিমান বহনে সক্ষম করেছে। এতে থাকবে যুদ্ধবিমান, প্রারম্ভিক সতর্কতা বিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোনের সমন্বিত ফ্লিট। এর ফলে প্রথমবারের মতো চীন দূর সমুদ্রে স্থায়ীভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ এয়ার উইং মোতায়েন করতে পারবে—যা প্রকৃত অর্থে “পাওয়ার প্রজেকশন”-এর ক্ষমতা এনে দিয়েছে।


প্রযুক্তিগত সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা
ফুজিয়ানে রয়েছে রাডার, উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, শর্ট-রেঞ্জ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, এবং ৩০ মিমি কামান প্রতিরক্ষার জন্য। এটি স্টিম টারবাইন ও ডিজেল-ইলেকট্রিক প্রোপালশন ব্যবস্থায় চলে—যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণুচালিত সুপারক্যারিয়ারের তুলনায় কিছুটা সীমিত দূরত্বে কাজ করতে সক্ষম। পরবর্তী রণতরী, টাইপ ০০৪, সম্ভবত পারমাণবিকচালিত হবে, যা এই সীমাবদ্ধতা দূর করবে বলে ধারণা।


কৌশলগত প্রভাব: 
ফুজিয়ানের অন্তর্ভুক্তি চীনের জন্য বিশাল কৌশলগত সুবিধা এনে দিয়েছে। এটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের শক্তি প্রক্ষেপণ ক্ষমতা বাড়াবে—যেসব এলাকা এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাবাধীন ছিল। এই রণতরী যুদ্ধের কৌশলের অংশ, যা সম্ভাব্য তাইওয়ান সংঘাত বা আঞ্চলিক সংকটে আমেরিকার হস্তক্ষেপ বিলম্বিত করতে পারে।


যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও ১১টি পারমাণবিকচালিত সুপারক্যারিয়ার ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে নৌ-প্রাধান্য ধরে রেখেছে, তবুও ফুজিয়ানের কমিশনিং প্রমাণ করে—চীনের নৌ আধুনিকায়ন এখন শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে দ্রুতগতির রূপ নিচ্ছে। একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের ভাষায়, “ফুজিয়ান কেবল আরেকটি বড় রণতরী নয়—এটি চীনের নৌ শক্তির রূপরেখা।”