ভারতের এখন প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি স্বর্ণনীতি—যেখানে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হবে স্বর্ণকে পণ্য হিসেবে দেখা হবে নাকি অর্থ হিসেবে, এবং সাধারণ মানুষ সেটিকে কীভাবে উপলব্ধি করবে। সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
2
11
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলির মধ্যে স্বর্ণ সম্পর্কিত ধারণায় মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিমে স্বর্ণকে “পাবলিক প্রপার্টি” বা জনসম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়, অথচ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—বিশেষ করে ভারত, জাপান, কোরিয়া ও চীনে—এখনও স্বর্ণকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হয়।
3
11
SBI-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “এখনই সময় এসেছে একটি সমন্বিত স্বর্ণনীতি গঠনের, যার জন্য প্রয়োজন স্বর্ণের প্রকৃতি নির্ধারণ করা—এটি কি একটি পণ্য, না কি অর্থ? এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তা এটিকে কীভাবে দেখে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।” বর্তমানে ভারতের স্বর্ণনীতি মূলত চাহিদা কমানো এবং বিদ্যমান স্বর্ণ মজুতকে পুনর্ব্যবহার করে উৎপাদনশীল কাজে লাগানোর ওপর নির্ভরশীল।
4
11
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বর্ণ মূলধন গঠনে সরাসরি অবদান না রাখলেও এটি একটি বিকল্প অর্থের উৎস হিসেবে কাজ করে। তাই স্বর্ণের অর্থায়ন বা "Monetization" ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
5
11
রিপোর্টে ভারতের স্বর্ণনীতির সঙ্গে চীনের তুলনাও টানা হয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে প্রায় ২,৩০০ টন স্বর্ণের মালিক, যেখানে ভারতের রিজার্ভ প্রায় ৮৮০ টন। চীনের একটি সুস্পষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি রয়েছে স্বর্ণ নিয়ে, কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তা অনির্দিষ্ট।
6
11
গৃহস্থালী পর্যায়ে, চীনা পরিবারগুলির হাতে গড়ে ১০ গ্রামেরও কম স্বর্ণ রয়েছে—যেখানে লক্ষ্য ২০ গ্রাম। অন্যদিকে ভারতীয় পরিবারগুলির গড় মালিকানা ২৫ গ্রামের বেশি। চীনের গৃহস্থালী স্বর্ণনীতি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু ভারতে এটি প্রয়োজনভিত্তিক।
7
11
চীনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বর্ণ উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলে বিভিন্ন স্তরে সক্রিয়ভাবে জড়িত। ভারতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা মূলত গয়না শিল্প, রপ্তানি এবং স্বর্ণ আমানত স্কিমে সীমাবদ্ধ। উৎপাদনের দিক থেকেও চীন বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদক। ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হলেও, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে বিপুল স্বর্ণভাণ্ডার রয়েছে।
8
11
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও চীন লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, কিন্তু ভারত এখনো সদস্য নয়—যদিও ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারক দেশ।
9
11
SBI জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের স্বর্ণনীতি ছয়টি মূল বিষয়ে আবর্তিত হয়েছে—মানুষকে অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, স্বর্ণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান রোধ, গৃহস্থালী চাহিদা হ্রাস, ঘরোয়া দাম স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ভারসাম্য রক্ষা করা। তবে এসব পদক্ষেপ ছিল স্বল্পমেয়াদি এবং মূলত চাহিদা কমানোর দিকে লক্ষ্য রেখে গৃহীত।
10
11
রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র তিনটি নথি—১৯৯২ সালের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন এবং দুটি তারাপোর কমিটি রিপোর্ট—দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বর্ণনীতির দিক নির্ধারণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্বর্ণের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব, যা এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে, সেই দিকটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি।
11
11
সবশেষে SBI বলেছে, স্বর্ণশিল্প যে দেশে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তাদের মতামত অতীতের নীতিনির্ধারণে উপেক্ষিত হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে ভারত এমন এক সামগ্রিক স্বর্ণনীতি প্রণয়ন করুক, যা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত গুরুত্বকে একত্রে বিবেচনায় নেবে।