আজকাল ওয়েবডেস্ক: জীবিত মায়ের জন্য কফিন কিনে আনলেন ছেলে। সেই কফিন সাজানো হল ফুল দিয়ে। সঙ্গে এল ব্যান্ড পার্টি। শেষকৃত্যের মতোই নিখুঁত আয়োজন। তবে কারও চোখে জল নেই, নেই দুঃখী মুখ। সকলেই ভীষণ খুশি, আনন্দিত। জীবিত বৃদ্ধাকে কফিনে তুলেই শুরু হল জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপন। গানবাজনায় রীতিমতো মেতে উঠলেন গ্রামবাসীরা। 

 

জীবিত মায়ের জন্য কফিন কিনে আনা থেকে শুরু করে, তাঁর চোখের সামনেই শেষকৃত্যের দৃশ্য সাজিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করেছিলেন বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে। ডেকে এনেছিলেন ব্যান্ড পার্টিও। যে আয়োজন বৃদ্ধাকে খুশি করেছে, শুধু তাইই নয়, দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছেন গ্রামবাসীরাও। বৃদ্ধার ছেলেকে আশীর্বাদ করেছেন তাঁরা। 

 

শেষকৃত্য মানেই মনমরা আত্মীয়রা কান্নাকাটি করবেন, সকলেই বিশেষভাবে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাবেন, এই দৃশ্য সকলের চেনা। কিন্তু এই গ্রামে শেষকৃত্যে রীতিমতো উদযাপন হয়। কারও চোখে জল থাকে না। কেউ কেউ জীবিত থাকাকালীন শেষকৃত্যের আয়োজন দেখতে পারেন। তাঁরা আদতেই ভাগ্যবান বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা। যেমন, এই ৭০ বছরের বৃদ্ধা। 

আরও পড়ুন: আলু চাষে 'অপয়া' তকমা, কৃষকদের সংসার বাঁচাতে তৃণমূল নেতার বিরাট পদক্ষেপ, চমকে গেলেন সকলে

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ চিনের হুনান প্রদেশে। তাওউয়ান কাউন্টির শাওয়াংজিকাউ শহরে নিজের জীবিত মায়ের জন্য কফিন কিনে এনেছেন এক যুবক। সেই কফিনে মাকে তুলে বাড়ি পর্যন্ত শোভাযাত্রা করে নিয়ে আসেন তিনি। ১৬ জন লোক ভাড়া করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে অনেকেই সেই কফিন কাঁধে তুলে নেন। বাড়ি পর্যন্ত কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যান্ড পার্টি বাজনা বাজাতে বাজাতে যায়। 

জানা গেছে, এটি এই গ্রামের বহু পুরনো রীতি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তিন থেকে চার জন জীবিত বাবা-মায়ের জন্য কফিন কিনে এমন ব্যবস্থা করেছেন। এর জন্য ভারতীয় মুদ্রায় খরচ হয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এই রীতি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা। শুধু যে বৃদ্ধার আয়ু বাড়বে, সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে, তাইই নয়, পরিবারেও সুখ, শান্তি বজায় থাকে। 

 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কফিনে উঠেই বৃদ্ধাকে উদযাপনে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছিল। হাতে ফ্যান নিয়ে তিনি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যান। কফিনটি ফুল দিয়েও সাজানো ছিল। অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন সেই শোভাযাত্রায়। গানবাজনায় তাঁরাও মেতে ওঠেন। 

 

জানা গেছে, ৭০ বছর পার করলে অনেকেই নিজেদের কফিনের ব্যবস্থা করেন। সন্তানরাও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য কফিন কিনে আনেন। এতে যারপরনাই খুশি হন বৃদ্ধরা। বড় হল ভাড়া করে শেষকৃত্যের বহু আচার পালন করা হয়। তবে কারও কাঁদো কাঁদো মুখ থাকে না। সকলেই রীতিমতো হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন। 

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি চিনের অত্যন্ত পুরনো রেওয়াজ। চিনে শেষকৃত্যের সময় কান্নাকাটি করা অশুভ মনে করা হয়। কিছু কিছু কুসংস্কার এখনও মেনে চলেন অনেকে। যেমন, কফিন একটি নির্দিষ্ট দিকেই রাখা হয়। কফিনের সামনে কান্নাকাটি করাও নিষিদ্ধ। আয়না দিয়ে ঢেকে রাখেন অনেকে। শেষকৃত্যে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করতে হয়। গানবাজনা বাজানোও সেই আয়োজনের মধ্যে পড়ে। মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় কেউ মনমরা হয়ে কফিনের সামনে থাকেন না।