আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক হৃদয়বিদারক চিকিৎসাগত ভুলের ঘটনা সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ নাগরিক এরিকা হে-র জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি চিকিৎসা ব্যবস্থার জবাবদিহি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
২০২০ সালে এরিকা কাঁধ ও বুকজুড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করছিলেন। এরপর চিকিৎসার জন্য তিনি ডাক্তারের কাছে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষার পর ডাক্তাররা জানান যে, তার ফুসফুসে ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৯৯.৯% নিশ্চিত। সেই সময় বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির তাণ্ডব চলছিল, যার ফলে হাসপাতালগুলোতে বহু সীমাবদ্ধতা কার্যকর ছিল। এই অবস্থায় ডাক্তাররা বায়োপসি করতে পারেননি, যা ক্যান্সার নিশ্চিত করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
এরিকা বলেন, “ডাক্তাররা যখন বললেন যে আমার ক্যান্সার হয়েছে, তখন আমাকে বাড়ি ফিরে আমার সন্তানদের ও বাবা-মাকে এই খবর দিতে হয়েছিল। আমি তাদের সামনে শক্ত থাকার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছিলাম।”
চিকিৎসকের পরামর্শে, এরিকাকে দ্রুত অস্ত্রোপচার করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে, তার ডান ফুসফুসের নিচের অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর তিনি ভেবেছিলেন, জীবন বাঁচাতে এটি হয়তো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহ পর, ডাক্তাররা এমন একটি খবর দেন যা তাকে আরও বেশি ভেঙে দেয়।
অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পরে চিকিৎসকরা জানান — তার ক্যান্সার ছিল না। ফুসফুসে যে গাঁট দেখা গিয়েছিল, তা আসলে ছিল নিউমোনিয়াজনিত সংক্রমণ। সার্জন তাকে জানান, “আপনি সেই ১ শতাংশ রোগীর মধ্যে পড়েছেন, যাদের ক্যান্সার নেই, বরং এটি ছিল একটি সংক্রমণ।”
এরিকা বলেন, “আমি যেমনটা ক্যান্সারের খবর শুনে হতবাক হয়েছিলাম, ঠিক তেমনই হতবাক হয়েছিলাম যখন জানলাম আমি ক্যান্সারে আক্রান্তই নই।”
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল, তিনি ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে ডনকাস্টার রয়্যাল ইনফার্মারিতে নিওনেটাল নার্স অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। তাই নিজের কর্মস্থলের ব্যবস্থার হাতেই এই বিভীষিকাময় ভুলের শিকার হওয়াটা তার কাছে এক গভীর মানসিক ধাক্কা।
এরিকা বলেন, “এই সমস্যা যদি ওষুধে সারানো যেত, তবে আমার জীবন আজও আগের মতো থাকত। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর আমার ফুসফুস আগের মতো কাজ করে না। এখন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক ভারী লাগে, কখনও কখনও মনে হয় যেন আবারও সেই অপারেশনটাই করছি।”
এই ঘটনার পর তিনি চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শেফিল্ড-ভিত্তিক ল’ ফার্ম মেডিকেল সলিসিটরস পরিচালনা করে। মামলাটি মীমাংসা হয়েছে, যদিও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় স্বীকার করেনি।
ডনকাস্টার ও ব্যাসেটলাও টিচিং হাসপাতাল এনএইচএস ট্রাস্ট-এর অ্যাক্টিং এক্সিকিউটিভ মেডিকেল ডিরেক্টর ড. নিক মালাব্যান্ড এক বিবৃতিতে এরিকা ও তার পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এরিকা হে এখন স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে আগাম অবসরের কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, “আমি সারাজীবন মানুষকে বাঁচানোর কাজ করেছি, কিন্তু আজ আমার নিজের জীবনই চিকিৎসা ব্যবস্থার ভুল সিদ্ধান্তে বদলে গেছে।”
এই ঘটনা শুধু এক নারীর কষ্টের কাহিনি নয়, বরং চিকিৎসা ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা ও মানবিক দায়বদ্ধতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিল।
