আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের সঙ্গে মে মাসে হওয়া যুদ্ধের কয়েক মাস পর পাকিস্তান তাদের সামরিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। দেশটির সেনা, নৌ ও বিমান—তিন বাহিনীর মধ্যে আরও সমন্বয় আনার লক্ষ্যেই পাকিস্তান একটি নতুন পদ “কম্যান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস” চালু করতে চলেছে। পাকিস্তানি মিডিয়ার দাবি, সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে নেওয়া “গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা” এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতা আরও বাড়াতে পারে, যা সরকারের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।


পাকিস্তানের একটি দৈনিক জানিয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৩ সংশোধনের মাধ্যমে এই নতুন পদ প্রবর্তনের পরিকল্পনা চলছে। এই অনুচ্ছেদটি বর্তমানে বলে যে সশস্ত্র বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও কমান্ড কেন্দ্রের হাতে এবং এর সর্বোচ্চ কমান্ড প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু নতুন সংশোধন কার্যকর হলে একীভূত কমান্ড কাঠামো গড়ে উঠবে এবং সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্থানে আসবে CDF—যিনি তিন বাহিনীর সামগ্রিক সমন্বয় তদারক করবেন।


এই পরিবর্তনের পেছনে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ মে ভারত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য একীভূত কমান্ডের নতুন নিয়ম জারি করে। এর লক্ষ্য ছিল আন্তঃবাহিনী সমন্বয় বাড়ানো এবং যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দেওয়া। ভারত ইতিমধ্যেই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ পদ সৃষ্টি করেছে, যিনি তিন বাহিনী ও টেরিটোরিয়াল আর্মিকে একত্রে পরিচালনা করেন এবং ইন্টিগ্রেটেড থিয়েটার কমান্ড গঠনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। পাকিস্তানের নতুন CDF পদকে ভারতীয় CDS কাঠামোর অনুপ্রেরণায় গড়ে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।


পাকিস্তানে যে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল আনা হচ্ছে, তাতে শুধু নতুন পদ নয়, সামরিক ক্ষমতার কাঠামোতেও বড় পরিবর্তন আনতে চায় শেহবাজ শরিফ সরকার। যদিও বিলের চূড়ান্ত খসড়া এখনো প্রকাশ করা হয়নি।


যদিও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এখনও সংবিধানগতভাবে সর্বোচ্চ কমান্ডার, তবু সংশোধনী পাস হলে বাস্তব ক্ষমতার বড় অংশই চলে যাবে CDF-এর হাতে। দলীয় সূত্র বলছে, প্রথমে সংশোধনীর বহু দিকেই আপত্তি তুলেছিল, তবে এখন অনুচ্ছেদ ২৪৩ সংশোধনে শর্তসাপেক্ষ সমর্থন দিতে পারে।


এই পরিবর্তনের সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আগামী ২৮ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা। বিশ্লেষকদের মতে, তিনিই নতুন CDF পদের প্রধান সম্ভাব্য প্রার্থী। এতে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ক্ষমতার ভারসাম্য আরও বদলে যেতে পারে। কারণ পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনীই পর্দার আড়ালের মূল ক্ষমতাকেন্দ্র—যা আফগানিস্তান ইস্যু থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বড় প্রভাব রাখে।


পুরো পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে ভারতের সামরিক আধুনিকায়নের জবাবে পাকিস্তানও তাদের কমান্ড কাঠামো শক্তিশালী করতে চাইছে। কিন্তু এই পদক্ষেপ ক্ষমতার কেন্দ্র কোথায় থাকবে, বেসামরিক নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ হারাবে, এবং সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও কতটা বাড়বে—সেসব প্রশ্ন এখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক দিকে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।