আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি ব্যাপক ফ্লাইট বিলম্ব ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জিপিএস স্পুফিং—এক ধরনের প্রযুক্তিগত জালিয়াতি, যা সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্র বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়। ভারতের ক্ষেত্রে এর এমন নজির অতীতে ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে পাওয়া গিয়েছিল।
গত কয়েক দিনে ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট এই ঘটনার কারণে প্রভাবিত হয়েছে—যা দিল্লিগামী ও দিল্লি থেকে রওনা হওয়া বিমান—উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। অভিযোগ উঠে যে, অসৎ উদ্দেশ্যে জাল বা ভুয়া স্যাটেলাইট সিগন্যাল প্রচার করা হচ্ছিল, যার ফলে আকাশে থাকা বিমানগুলো ভুল অবস্থান নির্দেশ পাচ্ছিল। এর পরিণতিতে একাধিক ফ্লাইটকে বিকল্প পথে পাঠানো হয়, বিমানবন্দরে জমে ওঠে তীব্র ভিড়, এবং যাত্রীদের সময়সূচি ব্যাপকভাবে পিছিয়ে যায়। এমনকি এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ভারতের অন্যান্য বিমানবন্দরেও।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানযাত্রায় নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক Navigation Integrity Category (NIC)–এর মান সাধারণত ৮ থাকে। কিন্তু স্পুফিংয়ের কারণে এই মান শূন্যে নেমে আসে, যা গুরুতর বিপদের ইঙ্গিত দেয়। দিল্লির ১১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা একাধিক পাইলট এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রিপোর্ট করেন।
জিপিএস স্পুফিং আসলে কী?
জিপিএস স্পুফিং এমন একটি সাইবার আক্রমণ যেখানে ভুয়ো জিপিএস সিগন্যাল পাঠানো হয়, যাতে লক্ষ্যবস্তু ডিভাইস বা বিমান ভুল অবস্থান, ভুল গতি বা ভুল সময় প্রদর্শন করে। সামরিক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষত যখন যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের নেভিগেশন সিস্টেম বিভ্রান্ত করা প্রয়োজন হয়।
এই ধরনের আক্রমণের ফলে বিমানের নেভিগেশন সিস্টেম ঠিকমতো স্যাটেলাইট সিগন্যাল পায় না, বরং জাল সিগন্যালকে প্রকৃত মনে করে ভুল অবস্থান ধরে নেয়। ফলাফল—উড়ান বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ইতিহাসে জিপিএস সিগন্যাল জ্যামিংয়ের উদাহরণ
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও অতীতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের নজির রয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল, ভারত পাকিস্তানের চীনা তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে সেগুলোকে অকার্যকর করতে জ্যামিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেই সময় ভারত সফলভাবে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীর অঞ্চলে সাঁইত্রিশটি হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করে।
এই ধরনের স্পুফিং বা জ্যামিং মূলত সামরিক কৌশলের অংশ হলেও, দিল্লির মতো আকাশসীমায় এর উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ, বাণিজ্যিক বিমানে কয়েকশো যাত্রী থাকে, এবং নেভিগেশন বিভ্রাট হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বর্তমানে তদন্ত চলছে—এই ঘটনার উৎস কোথায় এবং উদ্দেশ্য কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, স্পুফিং খুব সীমিত যন্ত্রপাতি দিয়েই সম্ভব; তাই সাইবার–ভিত্তিক এই আক্রমণ চিহ্নিত করা কঠিন হলেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা জরুরি।
দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অনুরোধ করেছে ধৈর্য ধরতে এবং ফ্লাইট ছাড়ার সময় সম্পর্কে আগাম তথ্য যাচাই করতে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো আকাশসীমার নিরাপত্তা উন্নত করতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
দিল্লিতে জিপিএস স্পুফিংয়ের এই ঘটনা ভারতের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় সতর্কবার্তা হিসেবে উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা ও সাইবার পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে তুলেছে।
