আজকাল ওযেবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশ ভারতের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার রাজ্য হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এই রাজ্যের কোনও জেলাই দেশের শীর্ষ পাঁচটি জনবহুল জেলার তালিকায় স্তা পায়বনি। আশ্চর্যজনকভাবে, দেশের সবচেয়ে জনবহুল জেলা হল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা।
২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী উত্তর ২৪ পরগনার আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ। ফলে এই জেলাই এখন ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। এবার জেনে নেওয়া যাক কেন উত্তর ২৪ পরগনা সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার অধিকারী এবং কোন জেলাকে ছাপিয়ে শীর্ষে পৌঁছল।
লখনউ উত্তর প্রদেশের সবচেয়ে জনবহুল জেলা, যার জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জনসংখ্যা উত্তর প্রদেশের প্রায় ১০টি ছোট জেলার মিলিত জনসংখ্যার সমান।
উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি সর্বাধিক জনবহুল জেলা
- লখনউ: ৫০ লক্ষ
- কানপুর নগর: ৪৫ লক্ষ
- গাজিয়াবাদ: ৪৫ লক্ষ
- আগ্রা: ৩৫ লক্ষ
- মীরাট: ৩ মিলিয়ন
(পরিসংখ্যানগুলি রাষ্ট্রসংঘ, ভারত সরকারের পরিসংখ্যান এবং ২০২৩-২০২৫ সালের সাম্প্রতিক অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি।)
থানের পতন
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় বসবাস করতেন ১.১০.৬ মিলিয়ন লোক। যা দেশের মধ্যে অন্যতম জনবহুল জেলা করে তুলেছিল তানে-কে। তবে, ২০১৪ সালের আগস্টে, থানে-কে দু'টি জেলায় বিভক্ত হয়: থানে এবং নতুন পালঘর। এই বিভক্তির ফলে থানের জনসংখ্যা ৮০.৭ মিলিয়নে নেমে যায়, ফলে উত্তর ২৪ পরগনার সর্বাধিক জনবহুল জেলা হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
(২০২৫ সালের অনুমান ২০১১ সালের আদমশুমারি এবং বৃদ্ধির হারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, কারণ ২০২১ সালের আদমশুমারি স্থগিত করা হয়েছিল।)
উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বর্তমান জনসংখ্যা কত?
বর্তমানে, পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত উত্তর ২৪ পরগনার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৯ লক্ষ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২,৪৬৯ জন লোকের বসবাস। ঘনত্বের কারণে এটি কেবল ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জেলাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যেও একটি।
কেন এই জেলা শীর্ষস্থানে?
এই জেলা কলকাতা মহানগরের সন্নিকটে অবস্থিত। ফলে যাতায়াতের সুবিধা, সাশ্রয়ী মূল্য এবং কাজের জন্য এই জেলায় বসবাসের সুবিধা রয়েছে। এই জেলার মধ্যেই রয়েছে বাংলার আইটি হাব সল্টলেক সেক্টর ফাইভ, নিউটাউন, রাজারহাট। সল্টলেকে ১,৫০০ টিরও বেশি সংস্থায় ৩,৫০,০০০ কর্মী কাজ করেন। ফলে উত্তর ২৪ পরগনার কলকাতা লাগোয়া অংশে বহিরাগতদেরও বসবাস, এবং তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তর ২৪ পরগনায় কৃষি, মৎস্য এবং ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি শিল্পও রয়েছে।
হুগলি নদীর তীরে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত এই জেলার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তা অধিগ্রহণ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী উত্তর ২৪ পরগনায় এসে বসতি স্থাপন করেন, ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৬ সালে, ২৪ পরগনাকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়।
এই জেলার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- ব্যারাকপুর, বারাসত এবং বিধাননগরের মতো প্রধান শহরগুলি এর অংশ, এবং কলকাতার সম্প্রসারণের ছোঁয়া এখানে রয়েছে।
- বিধাননগর-রাজারহাট এলাকায় বৃহৎ শিল্প ইউনিট এবং দ্রুত বর্ধনশীল আইটি সেক্টর রয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর এই জেলায় অবস্থিত।
- কলকাতার মেট্রো লাইন এই জেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে, নতুন রাস্তা এবং উড়ালপুল প্রকল্প এবং ক্রমবর্ধমান অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতি রয়েছে।
- ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে এই জেলায় নতুন নতুন শহর তৈরি হচ্ছে, স্মার্ট সিটি প্রকল্প এবং জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।
- গত আদমশুমারিতে থানে জনসংখ্যার দিক থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে
যেহেতু ২০২১ সালের আদমশুমারি হয়নি, তাই উপরের পরিসংখ্যানগুলি অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, জনসংখ্যার দিক থেকে থানে ছিল এক নম্বর জেলা:
২০২১ সালের হিসাব অনুসারে---
থানে (মহারাষ্ট্র) - ১ কোটি ১০ লক্ষ
উত্তর ২৪ পরগনা (বঙ্গ) - ১ কোটি
বেঙ্গালুরু (কর্ণাটক) - ৯৬ লক্ষ
পুনে (মহারাষ্ট্র) - ৯৪ লক্ষ
মুম্বাই শহরতলী জেলা - ৯৩ লক্ষ
