নিতাই দে, আগরতলা: ভারতীয় অর্থনীতিতে শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছেন দেশের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী কারিগর ও শিল্পীরা। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অসংগঠিত শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর ত্রিপুরা রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন অনেক বেশি উন্নতমানের। আগে রাজ্যে মাত্র চার হাজারের মতো এসএসজি ( স্ব সহায়ক) গ্রুপ ছিল। বিজেপি সরকার আসার পর এখন প্রায় ৫০ হাজারের মত গ্রুপ হয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা বাস্তবায়নের ফলে উপকৃত হবেন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বেনিফিশিয়ারিগণ। এমনটাই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা।
শুক্রবার আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্যভিত্তিক পিএম বিশ্বকর্মা প্রদর্শনী ও বাণিজ্যিক মেলার তিন দিনের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতি ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প উদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঝি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলেন সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সরকারে থাকতে চাই। এটা আমাদের আদর্শও। আমাদের দেশের সমস্ত প্রথাগত কারিগর ও শিল্পীদের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। যাদের জন্য আগে কখনও ভাবা হয়নি। কার্পেন্টার, রাজমিস্ত্রি, নাপিত, ধোপা, মালাকার, দর্জি, পুতুল ও খেলনা প্রস্তুতকারক সহ ১৮ টি নির্বাচিত ট্রেডের সাথে যুক্ত ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত কারিগর ও শিল্পীদের সুবিধা প্রদান করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্পটি ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এমএসএমই-র মাধ্যমে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন করার চিত্র প্রত্যক্ষ হয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা নির্বাচিত হওয়ার পরে ত্রিস্তরীয় পর্যায়ে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ থেকে সাত দিন তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর সেখানে দৈনিক ৫০০ টাকা করে স্টাইপেন দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি স্টাইপেন্ড এবং অ্যাডভান্সড ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর স্কিল ভেরিফিকেশনের পরেই ভাউচার বা ইউরোপের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা ও টুল কিট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ পর্ব উত্তীর্ণ হলে প্রথমে তাঁদেরকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আরও দুই লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ৫% কন্সেশনাল রেটে এই সহায়তা দেওয়া হয় এবং সেটা জামাতবিহীন।'
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী কতদূর পর্যন্ত চিন্তা করেন এক এক সময় ভাবতে অবাক লাগে। প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস এই বিশ্বকর্মা যোজনার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজ্যে পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পের উৎকৃষ্ট কাজের জন্য সেরা জেলা হিসেবে উত্তর ত্রিপুরা, সেরা ভিলেজ কমিটি হিসেবে ব্লকের উত্তর দেবেন্দ্রনগর ভিলেজ কমিটি, সেরা নগরশাসিত সংস্থা হিসেবে জিরানিয়া নগর পঞ্চায়েত এবং বিশালগড় পুরো পরিষদ সেরা ব্যাঙ্ক হিসেবে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে পুরস্কৃত করা হয়েছে।'
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পী উদ্যোগ মন্ত্রকের আধিকারিকেরা কয়েকজনকে ঋণের চেক, শসংশা পত্র, যন্ত্রপাতি, ও টুলকিট কিট তুলে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে শিল্প উদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ অতিথিগণ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত স্টলগুলি ঘুরে দেখেন।
