আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঞ্জাবের অমৃতসরের ঐতিহাসিক জালিয়ানওয়ালাবাগে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মূর্তি স্থাপন করা হোক। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জি বৃহস্পতিবার এমনই দাবি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের কাছে। তবে, সেই দাবি মানতে নারাজ মোদি সরকার। তৃণমূল সাংসদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সংসদে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জানিয়েছেন, আপাতত তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই।

১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নাইটহুড উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই ঐতিহাসিক প্রতিবাদকে স্মরণ করেই ঐতিহাসিক জালিয়ানওয়ালাবাগে নোবেল বিজয়ীর একটি মূর্তি স্থাপন করার দাবি জানানো হয়েছিল।

তৃণমূলের তরফে প্রকাশিত এক এক্স পোস্টে সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জি জানান, জালিয়ানওয়ালাবাগ স্মৃতিসৌধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও মূর্তি আছে কি না বা ভবিষ্যতে স্থাপনের কোনও পরিকল্পনা আছে কি না তা জানতে তিনি সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জবাবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জানিয়েছেন যে, "জালিয়ানওয়ালাবাগ মূলত হত্যাকাণ্ডে শহিদদের স্মৃতিরক্ষার্থে তৈরি। এখানে শহিদ গ্যালারি এবং সেই কুয়ো রয়েছে যেখানে অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাই কবির কোনও মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনা নেই।"

একসঙ্গে ঋতব্রত বলেছেন, "জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ও সবচেয়ে তীব্র প্রতিবাদ এসেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তরফে। তাঁর নাইটহুড ত্যাগ সেই সময় ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ। আজ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের স্কুলপাঠ্য থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা একধরনের সাংস্কৃতিক বর্জন।" সাংসদের দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুর একজন দক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ, শিল্পী এবং দার্শনিক হওয়ার পাশাপাশি একজন উৎসাহী রাজনৈতিক কর্মীও ছিলেন।"

এক্স-পোস্টে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, "জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদগুলির একটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর মূর্তি স্থাপন না করা মানে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের অবদানকে অস্বীকার করা। কেন্দ্র সরকারের উচিত এই ভুল শুধরে নেওয়া এবং রবিগুরুর গৌরবময় অবস্থানকে যথাযথভাবে মর্যাদা দেওয়া।"

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 24, 2025

জালিয়ানওয়ালাবাগ হল অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির প্রাঙ্গনের কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক উদ্যান এবং জাতীয় গুরুত্বের স্মারক।

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল, বৈশাখী উৎসবের দিন, "রোলাট আইন"-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় প্রায় ২০,০০০ লোকের জমায়েত হয়েছিল জালিয়ানওয়ালাবাগে। "রোলাট আইন" ব্রিটিশ পুলিশকে কোনও কারণ ছাড়াই যে কোনও ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দিয়েছিল। ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ার সেই জমায়েতে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন, যার ফলে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হন। অনেকেই গুলি থেকে বাঁচতে খোলা প্রাঙ্গণের কূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এই গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের থেকে পাওয়া তাঁর নাইট উপাধি পরিত্যাগ করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিকদের উপর নৃশংস নির্যাতনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ সালের ৩০ মে ভারতের ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষায় সংরক্ষিত শ্রেণির পদে ভয়াবহ শূন্যপদ, স্বীকার করল সরকার