আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্ষার জেরে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ফের বাড়ছে সাপের দৌরাত্ম্য। রবিবার দক্ষিণ দিল্লির ইস্ট অব কৈলাশের এক আবাসনের তৃতীয় তলার রান্নাঘরে খুঁজে পাওয়া গেল প্রায় তিন ফুট লম্বা একটি সাপ, যা মসৃণ হলুদ গায়ের উপর কালো দাগযুক্ত। জানা গেছে, এটি ছিল এক প্রজাতির ভারতীয় র্যাট স্নেক, যা বিষহীন হলেও ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ইস্ট অব কৈলাশ আবাসক সমিতির সভাপতি করণ আগরওয়াল জানান, “রান্নাঘরের ক্যাবিনেটেই সাপটি ছিল, আর খবর পেয়েই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএসকে ফোন করি।” পরিবেশ সংরক্ষণে নিযুক্ত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতা প্রশংসনীয়—তাদের র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট এসে সাপটিকে সাবধানে উদ্ধার করে।
তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে দিল্লি ও এনসিআর-এ একাধিক সাপ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে কুণ্ডলী পাকানো চার ফুট লম্বা একটি স্পেকটাকল্ড কোবরা উদ্ধার হয়েছে। এমনকি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন থেকেও উদ্ধার হয় একটি র্যাট স্নেক! গ্রেটার নয়ডায় একটি আলমারির ভিতর থেকে কোবরা, গাজিয়াবাদের একটি ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট থেকে সাত ফুট লম্বা র্যাট স্নেক, এমনকি বুরারি, পশ্চিম বিহার ও ছত্তরপুর থেকেও একাধিক উদ্ধার হয়েছে। একইসঙ্গে, আগ্রা শহরে জুন থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ১০০টিরও বেশি সাপ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সাপের মধ্যে ছিল ৩৪টি র্যাট স্নেক, ২৩টি কোবরা এবং ২১টি ওল্ফ স্নেক।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বর্ষাকালে প্রাকৃতিক বাসস্থল জলমগ্ন হওয়ায় সাপেরা শুষ্ক আশ্রয় খোঁজে—তাই তারা ঢুকে পড়ে ঘরবাড়ি, স্কুল, গুদাম বা এমনকি সরকারি ভবনেও। অনেক সময় দেখা যায়, গাড়ির বনেট, রান্নাঘরের ক্যাবিনেট বা মুরগির খোঁয়াড়ের মধ্যেও সাপ ঢুকে পড়েছে। ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর প্রতিষ্ঠাতা কার্তিক সত্যনারায়ণ জানান, “ভয় পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো নয়, বরং সচেতনতা এবং প্রশিক্ষিত দলের সাহায্য নেওয়াই এই পরিস্থিতিতে সঠিক পথ।” মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে, যা পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য ইতিবাচক দিক।
তবে সমস্যা একটাই—সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। করণ আগরওয়াল বলেন, “সাধারণ মানুষ জানেন না কীভাবে এমন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় বা কাকে ফোন করতে হয়। আমাদের এলাকায় শিশুরা পার্কে খেলে, তাদের জন্যই আমরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।” ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস জানিয়েছে, সাপ ধরার পর মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝা হয়। যদি সুস্থ হয়, তাকে আবার নির্ধারিত বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাপের সঙ্গে সহাবস্থানের এই ভাবনাই এখন সময়ের দাবি।
সতর্কতা: বাড়ি পরিষ্কার রাখুন, ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে রাখুন, খোলা নর্দমা ও ফাঁকফোকর বন্ধ করুন, আবর্জনা মাটি থেকে একটু ওপরে রাখুন এবং বর্ষার সময় ঘাস বা জলে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
