আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় দু’ দশকের পরিশ্রমে গড়ে উঠেছিল প্রেমের প্রতীক। যার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু এই স্থাপত্যের এমন একটি দিক রয়েছে, যা নিয়ে রহস্য যুগ যুগ ধরে। প্রশ্ন কী? প্রশ্ন, যমুনার জলোচ্ছ্বাস, প্রবল বিক্রম জেনেও কেন শাহজাহান দিল্লির আগ্রাকেই বেছে নিয়েছিলেন গোটা দেশের মধ্যে তাজমহল তৈরির জন্য? যমুনা সংলগ্ন বহু জায়গা যখন দিনে দিনে ক্ষতির কবলে, কেন তাজমহল ছুঁতে পারে না? যমুনার এত কাছে থাকা সত্ত্বেও স্মৃতিস্তম্ভটি কীভাবে অক্ষত রয়ে গেছে?


এই প্রসঙ্গে একেবারে শুরুতেই উল্লেখ করা যাক, স্ত্রী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাক লাগিয়ে দেওয়া যে স্থাপত্য তৈরি করতে চেয়েছিলেন শাহজাহান, তার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে। প্রায় দু’ দশক পেরতিয়ে কাজ শেষ হয় যখন, সময় এগিয়ে ক্যালেন্ডারে তখন ১৬৫৩। তথ্য, দীর্ঘ সময়কালে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক, কারিগর, স্থপতি জড়িয়ে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য স্থপতি তৈরিতে। 

আরও পড়ুন: ‘না জেনে ফর্ম ফিল-আপ করবেন না’, রাজ্যবাসীকে ‘ডবল ইঞ্জিন সরকারের চালাকি’ বোঝালেন মমতা, রাজনীতি সরিয়ে আওড়ালেন আবেগের রবীন্দ্রনাথ-নজরুল


ঐতিহাসিকদের মতে, শাহজাহান ইচ্ছাকৃতভাবে আগ্রায় যমুনার তীরে তাজমহল নির্মাণের জন্য একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন, কারণ যমুনা নদীর বাঁক তাজমহলকে বন্যা বা ভাঙন থেকে রক্ষা করে। পরবর্তীতে শাহজাহান তাঁর রাজধানী পরিবর্তন করে আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেন, কিন্তু তাজমহল আগ্রাতেই রয়ে যায়। তাহমহল আজও বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি হিসাবে গণ্য হয়।

কিন্তু যমুনার ফুঁসে ওঠা ভয়াবহ রূপের কথা জেনেও বিচক্ষণ শাহজাহান কেন আগ্রাকেই বেছে নিয়েছিলেন সারাজীবনের ভালবাসার প্রতীক তৈরির জন্য। কারণ কি কেবল আগ্রা সেই সময় রাজধানী ছিল বলে? তথ্য, সেটাই একমাত্র কারণ ছিল না। তাহলে কারণ কী? গবেষকরা বলছেন, এর পিছনে আরও কারণ ছিল একাধিক। 

সেগুলি কী? তথ্য, শাহজাহানের দরবার আগ্রা হওয়ার কারণে সেখানে সেই সময়ে ছিল এবং দক্ষ শ্রমিক এবং কাঁচামালের সহজলভ্যতা ছিল অন্যতম বড় কারণ।  এই প্রসঙ্গে ইতিহাসের আরও একটি তথ্যকে জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। তা হল- শাহজাহানের জীবনের শেষ সময় এবং তাঁর অবস্থান। শাহজাহান পুত্র ওউরঙ্গজেব তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলিতে আগ্রা দুর্গের ভিতরে মুসাম্মান বুর্জে বন্দি ছিলেন। সেখান থেকেই সরাসরি দেখা যেত তাজমহল। কথিত আছে যে ,তিনি তাঁর স্ত্রীর সম্মানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি দেখতে দেখতেই মারা যান। তবে তৈরির জন্য ওই জায়গাকেই বেছে নেওয়ার কারণ, ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলে যমুনার প্রবাহের গতি যা, তা সহজে ওই বিশাল স্থাপত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না বলেই মনে করেছিলেন তাঁরা। 

অর্থাৎ, মূল কারণ, তাজমহলের প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অবস্থান। ঐতিহাসিক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন করেন যে, শাহজাহান ইচ্ছাকৃতভাবে নদীর একটি নির্দিষ্ট বাঁক বরাবর একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন। এই বাঁক প্রবাহিত জলের সরাসরি প্রভাব কমাতে সাহায্য করে এবং নদীর তীরকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।

তাজমহলটি একটি উঁচু লাল বেলেপাথরের প্ল্যাটফর্মের উপর নির্মিত। যা সাদা মার্বেলে মোড়া সমাধিস্থলটিকে স্বাভাবিক জলস্তর থেকে অনেক উপরে তুলে রেখেছে। নদীর প্রাকৃতিক বক্ররেখার সঙ্গে এই উচ্চতা স্থাপত্যকে ক্ষতি থেকে আগলে রেখেছে। 

ফরাসি পর্যটক জঁ-ব্যাপটিস্ট ট্যাভার্নিয়ারের সময়কাল থেকে আরও একটি তথ্য সামনে আসে। তা হল- শাহজাহান দ্বিতীয় তাজমহল নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, এটি কালো মার্বেল পাথরের তৈরি, সাদা সমাধির ঠিক বিপরীতে, যমুনা নদীর ওপারে মেহতাব বাগের স্থানে।