আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে ভোটার তালিকার নামে নির্বাচন কমিশনের (ECI) এক নতুন নির্দেশিকা নিয়েছে ভয়াবহ মোড়। ২৪ জুন, ২০২৫ সালের নির্দেশিকার ৫(বি) ধারায় বলা হয়েছে, স্থানীয় ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) যদি কাউকে "বিদেশি নাগরিক" বলে সন্দেহ করেন, তবে তাঁকে নাগরিকত্ব কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারবেন।

আইনবিদ ও মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, এটি আসলে ‘গোপন এনআরসি’র সূচনা। এতে রাজ্যের দরিদ্র, দলিত, সংখ্যালঘু ও অনথিভুক্ত মানুষের নাগরিকত্ব বিপন্ন হতে পারে। আগে আশঙ্কা ছিল ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হবে; এখন উদ্বেগ নাগরিকত্ব ও বসবাসের অধিকার হারানোর। প্রায় ৪.৭৪ কোটি ভোটার—অর্থাৎ বিহারের প্রায় ৬০ শতাংশ—কে এবার ভোটার তালিকায় নাম রাখতে প্রমাণপত্র দেখাতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে মূলত জন্ম বা স্কুল সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। অথচ রাজ্যের বহু দরিদ্র মানুষের কাছে এসব কাগজপত্র নেই। এই প্রেক্ষাপটে ৫(বি) ধারা আরও সংকটজনক।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আলি কবীর জিয়া চৌধুরী জানান, “এই ধারা নাগরিকত্ব নির্ধারণের একটি অপ্রতুল ও দুর্নীতিপ্রবণ প্রক্রিয়া তৈরি করবে। একমাত্র ‘সন্দেহ’-এর ভিত্তিতে মানুষের জীবনধারণের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হতে পারে।” আর এক আইনজীবী মহম্মদ আমান খান বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় কোনও আইনগত সুরক্ষা নেই। এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ইচ্ছাধীনের উপর নির্ভরশীল।” তাঁদের মতে, এই সিদ্ধান্ত আসাম এনআরসি থেকেও বিপজ্জনক, কারণ এটি কোনও আইনি ভিত্তির উপর নয়, বরং ছড়ানো-ছিটানো প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের হাতে সীমাহীন ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে।

আইনজীবীরা দাবি করছেন, অবিলম্বে ৫(বি) ধারা বাতিল করা হোক এবং নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করুক যে ERO-দের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই। অন্যথায়, নাগরিক সমাজকে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। একজন আইনজীবীর মন্তব্যে চরম সতর্কতা উঠে আসে: “ভারতে এখন নাগরিক নয়, বরং সকলেই সন্দেহভাজন।”