আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত আত্মনির্ভরতার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ‘সিন্টার্ড রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট’ (REPM) উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ইলেকট্রিক যানবাহন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ইলেকট্রিক্স এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মতো আধুনিক প্রযুক্তির জন্য এসব চুম্বক অত্যন্ত জরুরি। ফলে এই উদ্যোগকে ভারতের প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন কর্মসূচি
সরকার মোট ৭,২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যার লক্ষ্য দেশে বছরে ৬,০০০ মেট্রিক টন REPM উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পূর্ণ উৎপাদন শৃঙ্খলা ভারতে গড়ে তোলা হবে রেয়ার আর্থ অক্সাইড থেকে ধাতু উৎপাদন, ধাতু থেকে অ্যালয় তৈরি এবং সর্বশেষে প্রস্তুত চুম্বক তৈরি পর্যন্ত সবকিছুই দেশের ভিতরে।
বর্তমানে ভারতের প্রায় সম্পূর্ণ REPM চাহিদাই আমদানির উপর নির্ভরশীল। আর ২০৩০ সালের মধ্যে এই চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, শিল্প বিকাশ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিকাশ—সব দিক থেকেই এই উদ্যোগটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেটের জন্য এই ঘোষণা এবং ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেলস মিশন—দুটোই মিলে একটি শক্তিশালী, নিরাপদ এবং প্রতিযোগিতামূলক মিনারেলস ইকোসিস্টেম গড়ার জাতীয় অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। ভারত এতদিন যেসব ক্ষেত্রে বিশ্বের সরবরাহের উপর নির্ভর করেছে, সেই খাতে দেশীয় উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে।
এখন প্রকৃত পরীক্ষা বাস্তবায়নে: প্রযুক্তি আনা, দক্ষ প্রক্রিয়াজাতকরণ গড়ে তোলা, দায়িত্বশীল খনন এবং ESG মান বজায় রাখা। সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এই প্রকল্প শক্তি-পরিবর্তন এবং নির্মাণ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিযোগিতা শক্তিশালী করবে।
মোট বাজেটের মধ্যে ৬,৪৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বিক্রয়-সংযুক্ত হিসেবে। ৭৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে মূলধনী ভর্তুকি হিসেবে, যন্ত্রপাতি ও পরিকাঠামো স্থাপনে। সরকার পাঁচটি উৎপাদনকারী সংস্থাকে ক্ষমতা বরাদ্দ করবে একটি বিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রতিটি সংস্থাকে সর্বোচ্চ ১,২০০ MTPA উৎপাদন ক্ষমতা দেওয়া হবে। স্কিমটি চালু থাকবে মোট ৭ বছর। প্রথম দুই বছর প্রকল্প স্থাপনের জন্য। পরের পাঁচ বছর ইনসেনটিভ বিতরণের জন্য।
REPM হল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বকগুলির মধ্যে অন্যতম। এগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, ড্রোন, স্যাটেলাইট, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ উচ্চ প্রযুক্তির অসংখ্য ক্ষেত্রে। ভারতে এর দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি হলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে, সরবরাহ শৃঙ্খলা শক্তিশালী হবে এবং ভারতের নেট জিরো ২০৭০ লক্ষ্য বাস্তবায়নে গতি বাড়বে।
সরকার জানিয়েছে, এই প্রকল্প ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’–এর বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী ও বিশ্বে প্রতিযোগিতার উপযোগী উৎপাদন ঘাঁটি তৈরি হবে যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, বিনিয়োগ বাড়াবে এবং বিশ্ববাজারে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট খাতে ভারতকে বড় খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
