আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোটাধিকার শুধুমাত্র একটি অধিকার নয়। সঙ্গে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে। গণতন্ত্রের এই মহোৎসব নির্বাচন যেখানে প্রতিটি ভোটই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। অভিযোগ ওঠে, দেশজুড়ে অনেকেই ব্যক্তিগত কাজ বা অনুষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভোট দেওয়া এড়িয়ে যান। তবে সম্প্রতি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময় এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা সামনে এসেছে যা দেখিয়ে দিল, গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে কোনও বাধাই বড় নয়। এই ঘটনার কথা সামনে এনেছে খোদ দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেরক সময় বিয়ে ছিল উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলার বাসিন্দা পুষ্পেন্দ্র সিং যাদব। তিনি আগাপুর গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য বিয়ের ঠিক পরদিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও বরযাত্রী সহ সরাসরি ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যান। সেখানে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কীভাবে একজন সাধারণ নাগরিক ব্যক্তিগত আনন্দের মুহূর্তে জাতীয় দায়িত্ব পালনে অবিচল থেকেছেন।
নির্বাচন কমিশন ও উত্তরাখণ্ডের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর যৌথভাবে এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে জানায়, ‘পুষ্পেন্দ্র সিং যাদব চন্দৌসির এক হোটেলে শিবি নামে এক তরুণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরদিন সকালে বিদায়ী অনুষ্ঠান শেষে বরযাত্রী নিয়ে রওনা দেন রামপুরের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে তিনি এবং তাঁর ভাই উপেন্দ্র ও অন্যান্য আত্মীয়রা ভোট দেন’। জানা গিয়েছে, ভোটকেন্দ্রে নবদম্পতিকে দেখতে জড়ো হয়েছিল স্থানীয় জনতাও। অনেকেই তাদের সেই সময়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এবং প্রশংসায় ভরিয়ে দেন এই দায়িত্বশীল আচরণের জন্য। শিক্ষাগতভাবে পুষ্পেন্দ্র একজন বি.এড. স্নাতক। তিনি বলেন, ‘ভোট আমাদের অধিকার। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে এটা আমাদের একটা বড় দায়িত্বও। এক একটি ভোট আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে’।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Election Commission of India (@ecisveep)
তিনি সকলকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদনও জানান। স্থানীয় গ্রামপ্রধান রাম বাবু যাদব পুষ্পেন্দ্রর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘এমন সচেতন নাগরিকরা সমাজের আদর্শ হয়ে থাকেন’। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে বলা হয়, ‘পুষ্পেন্দ্র সিং যাদব দেখিয়ে দিলেন, ভোট দেওয়া কেবল একটি কাজ নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের প্রতি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক’।
উল্লেখ্য, চলতি বছর বিহার এবং আগামী বছরে বিধানসভা ভোট রয়েছে বাংলায়। তার আগে একাধিক নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। জানানো হয়েছে, বিহারে নেপাল, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আসা বহু বিদেশি নাগরিককে ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তারপরেই এক পরিসংখ্যান শেয়ার করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুসারে, ১.৫৯ শতাংশ ভোটার, অর্থাৎ ১২.৫ লক্ষ ভোটার মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের নাম তালিকায় রয়ে গিয়েছে। আরও ২.২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৭.৫ লক্ষ ভোটার স্থায়ীভাবে বিহার থেকে চলে গিয়েছেন। তাঁরা আর রাজ্যেভোট দেওয়ার যোগ্য নন। আরও ০.৭৩ শতাংশ, প্রায় ৫.৫ লক্ষ ভোটারের নাম দু'বার ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে।
এই তথ্য মোতাবেক, বিহারের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৩৫.৫ লক্ষ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হবে। এই পরিসংখ্যান মোট ভোটারদের ৪.৫ শতাংশেরও বেশি। জানা যাচ্ছে, ৩৫.৫ লক্ষের থেকে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে জোরকদমে। নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের মতে, ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করার জন্য বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা বা SIR করা হচ্ছে, যাতে ভোটার তালিকায় কারা অভিবাসী, কারা মৃত্যু এবং নকল নথিভুক্ত ভোটারদের সমন্ধে জানা যায়। কমিশনের কর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার অখণ্ডতা এবং নির্ভুলতা বজায় রাখা।