আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়েতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ। এমনকী পণ হিসেবেও কয়েক লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন পাত্রের হাতে। কয়েক মাস পরেই নববধূর মর্মান্তিক পরিণতি! শ্বশুরবাড়িতে উদ্শধার নববধূর নিথর দেহ‌। বিয়ের পর সাত মাসও টিকল না সংসার। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের শিভামোজ্ঞায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের সাত মাস পর এক নববধূর নিথর দেহ উদ্ধার হয়েছে। সম্ববত তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। আরও পণের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এই ঘটনায়। 

মৃত নববধূর নাম, লতা। শিকারিপুরা তালুকের ডিবি হাল্লি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। চলতি বছরের শুরুতেই বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় অত্যাচার। মৃতার পরিবার জানিয়েছে, দেখাশোনা করে সাত মাস আগে গুরুরাজের সঙ্গে লতার বিয়ে হয়েছিল। 

রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরে অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত গুরুরাজ। পাত্র সরকারি চাকরি করেন জানতে পেরেই বিয়েতে রাজি হয় পরিবার।‌ ধুমধাম করে সেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন মেয়ের বিয়ের জন্যে। আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি ছিল না। পণ হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা লতার শ্বশুরবাড়িতে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। 

কিন্তু ৬০ লক্ষ টাকা পণ পাওয়ার পরেও সন্তুষ্ট ছিলেন না গুরুরাজ। যা থেকেই চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। একটি খালে ঝাঁপ দিয়ে নববধূ আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান। ঘটনাস্থলেই চটি, মোবাইল ফোন দেখে সন্দেহ হয়েছিল স্থানীয়দের। উদ্ধারকারী দল ও পুলিশ দীর্ঘক্ষণ তল্লাশির পর তরুণীর দেহ উদ্ধার করে। 

বাড়ি থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে লতা লেখেন, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। একাধিকবার মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন। আত্মহত্যার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। 

প্রসঙ্গত, গত আগস্ট মাসে পণের দাবিতে আরও এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। পণের জন্য সদ্য বিবাহিত তরুণীর গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল বিহার। এবারেও পণ হিসেবে সোনার গয়নার দাবি করেছিল শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু খানিকটা সময় চেয়েছিলেন তরুণীর বাবা। অধৈর্য হয়ে তরুণীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছিল বিহারের খাগাড়িয়া জেলার বরখান্দি তোলা গ্রামে। জানা গেছে, তরুণীর সঙ্গে বিভীষণ যাদবের বিয়ে হয়েছিল এক বছর আগে। তরুণীর বাবা জাদো যাদব জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা পণের জন্য হেনস্থা করতেন তরুণীকে। আরও সোনার গয়নার দাবি করতেন তাঁরা। এদিকে তরুণীর বাবা আশ্বাস দেন, আর দুই মাস পরেই তিনি সব দাবি পূরণ করবেন। 

কাঁদতে কাঁদতেই জাদো যাদব জানান, 'আমি শুধুমাত্র দুই মাস সময় চেয়েছিলাম!' আরেক আত্মীয় জানান, সোনার গয়না না পেলে তরুণীকে খুনের হুমকিও দিয়েছিল তারা। তাঁদের আরও অভিযোগ, আগে বিভীষণ চাষবাসের কাজ করতেন। কিন্তু গত মাস ধরেই বিহারেই গাঁজা ও বিষমদ বিক্রি করতেন। তরুণীর ভাইয়ের অভিযোগ, প্রথমে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। এরপর তাঁর দেহটি ঝুলিয়ে দেন। তরুণীর শরীরেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

তরুণীর বাবা জানিয়েছিলেন, 'আমার যা সার্মথ্য ছিল, সবকিছুই দিয়েছিলাম। তাও সোনার হার আর গাড়ির দাবি করছিল মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। সদ্য ছেলের বিয়ে দিয়েছি। ছেলের বিয়ের সময় থেকেই সোনার হারের দাবিদাওয়া শুরু হয়। দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। তার মধ্যেই মেয়েকে খুন করে দিল।' তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক।