নিতাই দে, আগরতলা: উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে নিজেকে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাতে আটক এক। ধৃতের যুবকের নাম প্রশান্ত মোহন। জানা গিয়েছে, তিনি দিল্লির একজন ইউপিএসসি পরীক্ষার কোচ এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত এবং মানুষের সঙ্গে বহু প্রতারণা করে চলছে তিনি।
পুলিশ সূত্রে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ অক্টোবর। সেদিন প্রশান্ত মোহন লখনউয়ের ওই পাঁচতারা হোটেলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ‘ভারতীয় রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস)-এর আধিকারিক’ পরিচয় ব্যবহার করে রুম বুক করেন। এমনকি হোটেল কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে নিজেকে লখনউয়ের পুলিশ কমিশনারের আত্মীয় বলেও দাবি করেন। এই ভুয়ো পরিচয় দেখিয়ে তিনি হোটেলে নির্বিঘ্নে ওঠেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করা।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী লখনউয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য এই পাঁচতারা হোটেলেই উঠেছিলেন। কিন্তু প্রশান্ত নিজেকে আইআরএস অফিসার পরিচয় দিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রীর রুমে প্রবেশ করেন, তখন তার চালচলন দেখে মানিকের সন্দেহ হয়। এবং মুখ্যমন্ত্রী ওই আধিকারিক কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ঠিক মতো সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিলেন না বলে অভিযোগ। এর ফলে সন্দেহ আরও তীব্র হয় তাঁর। পরবর্তী সময়ে ভুয়ো আধিকারকি মুখ্যমন্ত্রীর রুম থেকে বেরিয়ে চলে যান।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তাঁর পরিচয় ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা সদস্যরা দ্রুত স্থানীয় থানায় খবর দেন। পুলিশ হোটেলে পৌঁছনোর আগেই প্রশান্ত মোহন চেক আউট করে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশি অনুসন্ধান ও সিসিটিভি যাচাইয়ের মাধ্যমে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে হোটেলের কাছাকাছি এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে লখনউ পুলিশ। মঙ্গলবার রাজধানীর আগরতলার সাংবাদিকদের একটি কর্মশালার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই তথ্য জানালেন। জানা গিয়েছে এই ছেলেটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ তাঁকে জেরা করছে।
ঘটনা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা জানান, “নিরাপত্তা ভেদ করে কেউ এভাবে ছদ্মবেশে প্রবেশের চেষ্টা করা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় কোনও অসুবিধা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”
পুলিশ অভিযুক্তের ফোন, নথি ও পরিচয়পত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন তাঁর উদ্দেশ্য শুধুই ব্যক্তিগত বৈঠক, না কি এর পিছনে অন্য কোনও বড় উদ্দেশ্য বা সংগঠিত চক্র কাজ করছে। এদিকে ত্রিপুরা পুলিশে লখনউ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তদন্তে সাহায্য করার জন্য।
