আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ ফের প্রাতরাশ। তারপরই কী ঘোষণা হবে বড় কোনও সিদ্ধান্ত? ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সিদ্দা-ডিকে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে খাড়গের হস্তক্ষেপে সেই দ্বন্দ্বে কিছুটা প্রলেপ পড়েছে। এক টেবিলে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন ঐক্যের ছবি। বার্তা দিয়েছেন, আগামীতে কংগ্রেসের হয়ে একসঙ্গে লড়াইয়ের। এসবের মধ্যেই মঙ্গলবার ডিকে-র আহ্বানে দ্বিতীয়বার প্রাতরাশে বসছেন কর্নাটক কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা। ফলে বড় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় জল্পনা তুঙ্গে।

সূত্র জানিয়েছে যে, কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে সোনিয়া-রাহুলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, দক্ষিণী রাজ্যের বিরোধ শীঘ্রই মিটিয়ে দেবেন। যুক্তি দিয়েছিলেন যে, "আমার উপস্থিতিতে আড়াই বছরে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা দেওয়া হয়েছিল, তা সম্মান করা উচিত। অন্যথায়, আমার নিজের রাজ্যে আমার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।" এই দ্বিতীয়বার মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রদেশ কংগ্রেসকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে একটি মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন।

খাড়গে তখন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীকে বলেছিলেন, এবং তিনি সমস্যাটি "সমাধান" করবেন। প্রতিক্রিয়া ছিল সিদ্দারামাইয়া-ডিকেএস-এর মধ্যে একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করা এবং উভয় পক্ষকে খুশি রাখার জন্য, ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে নেতৃত্ব পরিবর্তন 'কখন'-এর বিষয়, 'যদি'-এর বিষয় নয়।

এর মধ্যেই শিবকুমার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন যে, "আমি এবং মুখ্যমন্ত্রী একটি দল হিসেবে একসঙ্গে কাজ করে চলেছি। কর্নাটকের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা এবং জোরদার করার জন্য আমি মঙ্গলবার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাতরাশের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।" 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিদ্দা-ডিকে কয়েক বছর আগে মরুরাজ্য রাজস্থানের শচীন পাইলট ও অশোক গেহলটকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। সে রাজ্যেও ওই দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল। 

সূত্র আরও জানিয়েছে যে, ডিকেএস-কে কংগ্রেসেরহাইকমান্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানোর জন্য ১৫ দিনের মধ্যে দিল্লিতে ডাকা হবে। তাঁকে 'আশ্বাস' দেওয়া হবে যে, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। তবে, খুব দ্রুত তা হবে না। কারণ, রাহুল গান্ধী, সরকার পরিচালনার মাঝপথে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে আচমকা বদলের পক্ষপাতী নন।  

'প্রাতরাশ নং ১'

শনিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছিলেন ডিকে। উপমা, ইডলি সহযোগে দু'জনের কথা হয়েছিল। সেখানেই  ক্ষমতার সুষ্ঠু হস্তান্তর নিশ্চিত করার জন্য একটি 'উত্তরাধিকার পরিকল্পনা' তৈরি করতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের হাসিমুখের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পরে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া দাবি করেন, সবকিছু ঠিক আছে।

কিন্তু হাসির আড়ালে মতান্তর ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সূত্রগুলি জানিয়েছে যে, ক্ষমতার পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে স্পষ্ট ঐক্যমত হয়নি।  সিদ্দারামাইয়া, ডিকেএস'কে বলেছিলেন যে- সরকার গঠনের সময় কারও সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার কোনও 'রফা' সম্পর্কে তাঁর কোনও স্মৃতি নেই।       

সূত্র জানিয়েছে, ডিকেএস অবশ্য এই দাবি মেনে নিতে অস্বীকারল করেন।  আর সিদ্দারামাইয়া, যখন জানতেন যে কংগ্রেস ডিকেএস-এর মুখ্যমন্ত্রীত্বের স্বপ্নের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সদয় হবে না, তখন তিনি আবারও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০২৮ সালের নির্বাচনের জন্য একটি আপস প্রস্তাব দেন।

সূত্র জানায়, ডিকেএস তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। তবে, বিদ্রোহের পথো হাঁটতেই রাজি নন উপমুখ্যমন্ত্রী। কারণ তিনি জানেন যে, তাঁর গোষ্ঠীরবিধায়ক সংখ্যা কম। সিদ্দারামাইয়া ১০০ জনেরও বেশি বিধায়কের সমর্থন পাবেন ক্ষমতায় থাকতে। এছাড়াও সিদ্দা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অহিন্দা সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা। ডিকেএস-এর দাবি মূলত ২০২৩ সালের জয়ের পর ক্ষমতা বদলের প্রতিশ্রুতি রক্ষা বাস্তবায়ন এবং সমানভাবে প্রভাবশালী ভোক্কালিগা জাতের সমর্থনের উপর ভিত্তি করে।

অতএব, ডিকেএস অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। গত সপ্তাহে তাঁর শিবির স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাঁরা আশা করছে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর শিবির এই সময়সীমা নিয়ে খুব খুশি নয়।

সূত্র জানিয়েছে, ২০২৬ সালের পরেও ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, সিদ্দারামাইয়া তাঁকে এই মেয়াদ শেষ করার এবং ২০২৮ সালের নির্বাচনে ডিকেএসকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী 'মুখ' হিসাবে সমর্থন করার পরামর্শ দিয়েছেন।