আজকাল ওয়েবডেস্ক: একাধিক প্রধান ভারতীয় সংবাদপত্র আজ জানিয়েছে যে, ভারত বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক সমতা-পূর্ণ দেশ। এই দাবি একটি সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন: ২০১৯ সালের হিসেবে ২১৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৭৬তম। এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের উৎস ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB), যারা বিশ্বব্যাঙ্কের একটি তথ্যপত্রকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই তথ্য যাচাই না করেই প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্যে বলা হয়েছে, ভারতের খরচভিত্তিক গিনি সূচক ২০১১-১২ সালের ২৮.৮ থেকে ২০২২-২৩ সালে ২৫.৫-এ নেমেছে। কিন্তু এই খরচভিত্তিক সূচককে আয়ভিত্তিক গিনি সূচকগুলির সঙ্গে তুলনা করে PIB এক গুরুতর পরিসংখ্যানগত ভুল করেছে। খরচভিত্তিক গিনি সূচক স্বভাবতই আয়ভিত্তিক সূচকের তুলনায় কম হয়, কারণ ধনীরা আয়ের বড় অংশ সঞ্চয় করেন। সত্যিটা হল, World Inequality Database-এর মতে ভারতের আয়ভিত্তিক গিনি সূচক ২০২৩ সালে ৬২, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে এই সূচক ছিল ৬১, এবং তাতে ভারতের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। আরও উদ্বেগজনক হল, ভারতের সম্পদ বৈষম্যের গিনি সূচক ২০২৩ সালে পৌঁছেছে ৭৫-এ। 

বিশ্বব্যাঙ্ক নিজেও স্বীকার করেছে যে ভারতের খরচ সংক্রান্ত খাতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ফলে সেগুলি প্রকৃত বৈষম্যকে আড়াল করতে পারে। তুলনামূলকভাবে, FAO-র ক্যালোরি গ্রহণের বৈষম্যের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৮৫টি দেশের মধ্যে ১০২তম – ২০০৯ সালের ৮২তম স্থান থেকে আরও অবনতি। সব দিক থেকে পর্যালোচনা করলেই দেখা যায়: ভারত একটি অত্যন্ত বৈষম্যপূর্ণ দেশ, এবং এই বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। এই বাস্তবতাকে ঢেকে রাখা শুধু বিভ্রান্তিকর নয় – বিপজ্জনকও বটে। সরকারের প্রকৃত নীতিগত হস্তক্ষেপ ও ধনীদের উপর করের চাপ ছাড়া এই বৈষম্য কমানো সম্ভব নয়।