আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এনসিআর) সারা দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়ে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে। এর আগের রাতে হওয়া বৃষ্টিপাতে শহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এবারের বর্ষাকালীন মৌসুমে এটি তুলনামূলকভাবে আর্দ্র আবহাওয়া তৈরি করেছে। সূত্রে খবর বর্তমানে এটি মনসুন ট্রাফ অঞ্চলে অবস্থান করছে। যার ফলে বায়ুর মান সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিল্লিতে গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ৫৬। এটি 'সন্তোষজনক'শ্রেণির মধ্যে পড়ে। এর আগের দিন অর্থাৎ বুধবার বিকেল ৪টায় এই মান ছিল ৬৬। চলতি জুলাই মাসে দিল্লির গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ৭৯। খবর সূত্রে, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সূচকটি চালু হয়। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার জুলাই হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে যে, শুক্রবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। বৃহস্পতিবার শহরের বেশিরভাগ অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিল্লির প্রধান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সফদরজং-এ ২৪ ঘণ্টায় (সকাল ৮:৩০ পর্যন্ত) ৩৯.১ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। পালামে ৩৪.৬ মিমি, লোধি রোডে ৩২.৬ মিমি, রিজে ২১ মিমি, অয়নাগারে ১৬.৩ মিমি, প্রগতি ময়দানে ২৩.১ মিমি, নাজাফগড়ে ২৫.৫ মিমি, পুসায় ৪১ মিমি এবং জনকপুরিতে ১৭.৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ১৫.৫ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিকে 'হালকা' এবং ১৫.৬ থেকে ৬৪.৪ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিকে 'মাঝারি' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর বেশি হলে সেটিকে 'ভারি' বৃষ্টিপাত ধরা হয়। চলতি মাসে দিল্লিতে মোট ২৫৯.৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে তথ্যে খবর। যেখানে দীর্ঘমেয়াদী গড় (LPA) হচ্ছে ২০৯.৭ মিমি। গত বছর একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২০৩.৭ মিমি, অর্থাৎ এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি।

আরও পড়ুনঃ হাড়হিম পরিণতি যুবকের! অভিনেত্রীর গাড়ি পিষে দিল একুশ বছরের ছাত্রকে, আসামের নারকীয় ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ ...

এর আগেও দিল্লিতে মে ও জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মে মাসে ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সেখানে ১৮৬.৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যা গড় ৩০.৭ মিমি এর তুলনায় অনেক বেশি। জুন মাসেও ১০৭.১ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ৭৪.১ মিমি দীর্ঘমেয়াদী গড়ের তুলনায় ৪৫% বেশি।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) গোটা দিল্লি শহরের জন্য ইতিমধ্যেই রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এমনকি আগামী কয়েকদিনেও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

দিল্লির কনট প্লেস, আইটিও, প্রগতি ময়দান, পাঁচকুইয়ান রোড এবং বাহাদুর শাহ জাফর মার্গের মতো এলাকাগুলিতে ভয়াবহ জল জমে দীর্ঘ সময় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, যানবাহনগুলি ধীর গতিতে জলমগ্ন সড়কের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ কষ্টে রাস্তায় যাতায়াত করছে৷ অনেক কষ্টে তারা রাস্তা পার হচ্ছে। মহারানি বাগ, সিভি রমণ মার্গ এবং কনট প্লেস আউটার সার্কেল এলাকায় রাস্তা বৃষ্টির জলে ভেসে যাচ্ছে। অনেক গাড়ি জলে প্রায় পুরোপুরি ডুবে যায়।

ঢৌলা কুয়ান, মিন্টো ব্রিজ, নারায়ণা, আর কে পুরম এবং জংপুরা এলাকায়ও কিছুটা জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গিয়েছে। মতি বাগ, পুল প্রহ্লাদপুর, টলকাটোরা রোড, মুখার্জী নগর এবং রোহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতেও ব্যাপক জল জমে যায়। এর ফলে সাধারণ কর্মজীবী মানুষ এবং ছাত্রছাত্রীদের ভয়ানক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।

ঘটনার জেরে প্রাক্তন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লির পরিকাঠামোর করুণ অবস্থার জন্য তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'দিল্লির পাঁচকুইয়ান রোডের অবস্থা মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টিতে এরকম! এটি সরকারের কৃতিত্ব! কোথায় দিল্লির পিডব্লিউডি মন্ত্রী?' 

আরও একটি পোস্টে আতিশি জানান, 'সিভিল লাইন্স, যেখানে এলজি সাহেব ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি, সেখানে রাস্তাগুলো জলে ভেসে যাচ্ছে। ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেই দিল্লির এই অবস্থা।' পাশপাশি তিনি সেই রাস্তার ভিডিও ফুটেজও শেয়ার করেন।