লাদাখে সাম্প্রতিক হিংসা  নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটিতে স্থানীয় প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালেন লেহ অ্যাপেক্স বডির (LAB) সহ-সভাপতি চেরিং দর্জে লাকরুক। গত ২৪ সেপ্টেম্বর লেহ শহরে পুলিশের গুলিতে চার জন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির গঠন নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি. এস. চৌহানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক বিচার বিভাগীয় প্যানেলকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মোহন সিং পারিহার এবং ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবার আধিকারিক তুষার আনন্দ।

তবে এই কমিটিতে কোনও লাদাখি সদস্য না থাকার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লাদাখের নাগরিক সমাজের নেতারা। শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে লেহ অ্যাপেক্স বডির সহ-সভাপতি চেরিং দর্জে লাকরুক বলেন, “কমিটির গঠনে একটিও লাদাখি সদস্য নেই। ফলে এখানকার মানুষের মনে তদন্ত নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা চাই স্বচ্ছ তদন্ত। এজন্য কমিটির কাঠামো সংশোধন করে স্থানীয় প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে।”

লাকরুক আরও জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আদেশে লেহ পুলিশের দায়ের করা এফআইআর (নম্বর ১৪৪/২০২৫) এর উল্লেখ আছে, যা আসলে বিক্ষোভকারীদের দিকেই তদন্তের তীর ঘুরিয়ে দিচ্ছে। “আদেশে এফআইআরের উল্লেখ থাকায় মনে হচ্ছে আমাদের ছেলেদেরই অভিযুক্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: নিরামিষের বদলে আমিষ বিরিয়ানি দেওয়ার অভিযোগ! হোটেল মালিককে গুলি করে খুন, তুমুল উত্তেজনা রাঁচিতে

এই মামলায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারায় লেহ পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। এই ঘটনায় প্রায় ৫০ জনেরও বেশি বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই পরে জামিন পেয়েছেন।

লাকরুক, যিনি লাদাখ বৌদ্ধ সংঘের (Ladakh Buddhist Association) সভাপতিও, আরও বলেন—“যদি সরকার চায় জনগণ এই তদন্তে আস্থা রাখুক, তাহলে লাদাখের প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি।”

তিনি জানান, প্রশাসন একদিকে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসার দাবি করছে, অন্যদিকে জনসমাবেশ ও মোবাইল ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। শনিবার সকাল থেকেই লেহ শহরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, শান্তি মিছিলে অংশ নিতে না পারেন সে জন্য লাকরুককে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

প্রশাসন শহরে নাগরিক নিরাপত্তা সংহিতা ২০২৩-এর ১৬৩ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। “এই সব ব্যবস্থা প্রমাণ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। প্রশাসন যদি জনগণকেই ভয় পায়, তবে সেটি গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নয়,” তীব্র ভাষায় মন্তব্য করেন লাকরুক।

তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি ভাবে দমননীতি দিয়ে গণআন্দোলন থামানো যাবে, সেটা ভুল ধারণা। আমরা ভয় দেখিয়ে নয়, সমতার পরিবেশে কথা বলতে চাই। যদি সরকার জনস্বার্থবিরোধী কোনও প্রস্তাব দেয়, আমরা তা মানব না।”

সূত্রের খবর, দীপাবলি উৎসব শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আবারও লাদাখের নাগরিক সমাজের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার ঘোষণা করতে পারে। ২০২৩ সাল থেকে এই আলোচনাগুলি চললেও, গত ৬ অক্টোবরের নির্ধারিত বৈঠকটি বিক্ষোভকারীদের নিহত হওয়ার ঘটনার পর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বয়কট করা হয়।

লাকরুক প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা লাদাখের জনগণকে “বহিরাগত শক্তির হাতিয়ার” বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। “এভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক দাবি দুর্বল করা যায় না,” বলেন তিনি।

লাদাখে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি টানটান। স্থানীয় জনগণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে সংবিধানিক সুরক্ষা ও পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।