আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন- দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-কে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। কেন্দ্র উল্লেখ করেছে যে, এই পদক্ষেপ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা আরও পোক্ত করবে।
বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, "সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ভারত ধারাবাহিকভাবে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। টিআরএফ-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন মনোনীত করার সিদ্ধান্ত একটি সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যা সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গভীর সহযোগিতার প্রতিফলন।"
সরকার নিশ্চিত করেছে যে ভারত "সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি"র প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং "সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং তাদের সহযোগীদের জবাবদিহি করতে হবে তা নিশ্চিত করার জন্য তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।"
মার্কিন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি এটিকে "ভারত-মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার একটি দৃঢ় স্বীকৃতি" বলেও অভিহিত করেছেন।
এক্স বার্তায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লিখেছেন, "লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর শাখা সংগটন টিআরএফ-কে বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এফটিও) এবং বিশেষভাবে মনোনীত বিশ্বব্য়াপী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী (এসডিজিটি) হিসাবে মনোনীত করার জন্য মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রশংসা করি। তারা ২২শে এপ্রিলের পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে।"
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও বলেছেন, "আজ, মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-কে বেদিশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এফটিও) এবং বিশেষভাবে মনোনীত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এসডিজিটি) হিসাবে তালিকাভুক্ত করছে।"
মার্কিন বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, "বিদেশ দপ্তরের গৃহীত এই পদক্ষেপগুলি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং পহেলগাঁও হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ন্যায়বিচারের আহ্বান বাস্তবায়নের সাপেক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টিকেই তুলে ধরে।"
এর আগে, ভারতীয় সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কারা এই দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট?
 
 সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সৈয়দের সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা সংগঠন হল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ২০১৯ সাল থেকেই কাজ করছে এই সংগঠন। গত কয়েক বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে পরিযায়ী শ্রমিক, কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগও আছে দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর বিরুদ্ধে। 
২০২১ সালে জম্মুতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন দিয়েও হামলা চালিয়ছিল এই সংগঠন। পুলওয়ামাতেও হামলার পিছনে এই সংগঠন ছিল বলে জানা গিয়েছে। ২০২৩ সালেই এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
পহেলগাঁও হামলা এবং পরিণতি
 
 গত ২২শে এপ্রিল, চারজন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী পহেলগাঁও-এর বৈসরান উপত্যকায় হামলা চালায় এবং তাদের ধর্ম নিশ্চিত করার পর হিন্দু পুরুষদের গুলি করে।
এর ফলে ভারত, ৭ই মে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসীবাদী লঞ্চপ্যাডগুলিতে অপারেশন সিঁদুর অভিয়ান চালায়। অভিযান চলাকালীনই ভারত, রাওয়ালপিন্ডিতে নূর খান বিমান ঘাঁটি-সহ পাকিস্তানের প্রধান সামরিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং পাঞ্জাব ও রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্তে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।
ওয়াশিংটন এবং উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে ট্রুথ সোশালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। তবে, ভারত ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, যুদ্ধবিরতি তাঁর হস্তক্ষেপ বা বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করার হুমকির কারণেই হয়েছিল।
ভারত অবশ্য দাবি করেছে যে, নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে যেকোনও সমস্যা সরাসরি দুই দেশের মধ্যে নিষ্পত্তি করা উচিত, বাইরের কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের ডিজিএমও তাঁর ভারতীয় কাউন্টারপার্টের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির অনুরোধের পর গুলি বিনিময় শেষ হয়। ১০ মে উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
