আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রথমবারের জন্য সিসমিক বা ভূমিকম্পের জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ‘জোন সিক্স’ চালু করেছে ভারত। আর এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সম্পূর্ণ হিমালয় পর্বতমালাকে।

ভারতীয় মান নিয়মকরণ ব্যুরো (BIS) দ্বারা সংশোধিত ‘আর্থকোয়েক ডিজাইন কোডে’ এই নতুন মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

দেশের মধ্যে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানচিত্রে এই পরিবর্তনকে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংশোধন হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন মূল্যায়ন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ অঞ্চল মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকির সিসমিক জোনে পড়েছে। এর আগে হিমালয়ের অঞ্চলকে ভাগ করে কোথাও জোন–ফোর ও কোথাও বা ফাইভে ভাগ করা হলেও বর্তমানে পুরো হিমালয় আর্ককেই একত্রিত করে সর্বোচ্চ বিপদসীমা জোন সিক্সে রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো মানচিত্রে দীর্ঘদিন অচল থাকা ফল্ট–লাইনে সঞ্চিত শক্তির ঝুঁকিকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। বিশেষ করে মধ্য হিমালয়ে, যেখানে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে বড় কোনও ভূমিকম্প হয়নি।

হিমালয় পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় টেকটোনিক সংঘর্ষসীমার উপর অবস্থান করায় এটি ভারতের সর্বোচ্চ সিসমিক ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।

ভারতীয় প্লেট প্রতিবছর প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার গতিতে উত্তর দিকে সরে ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। এই সংঘর্ষেই সৃষ্টি হয়েছিল হিমালয় পর্বতমালা, এবং এখনও সেই চাপ অব্যাহতভাবে পর্বতকে উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই এলাকার শিলা এখনও ভাঁজ হচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে, অর্থাৎ অঞ্চলটি অত্যন্ত অস্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেইন ফ্রন্টাল থ্রাস্ট (MFT), মেইন বাউন্ডারি থ্রাস্ট (MBT) এবং মেইন সেন্ট্রাল থ্রাস্টের (MCT) মতো একাধিক বড় ফল্ট লাইনের উপর হিমালয় দাঁড়িয়ে। যেকোনও থ্রাস্টই বড় ভূমিকম্প ঘটাতে সক্ষম।

অনেক জায়গায় শতাব্দীর পর শতাব্দী বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় তার অভ্যন্তরে বিরাট শক্তি সঞ্চিত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।

নতুন মানচিত্রে হিমালয় ফ্রন্টাল থ্রাস্ট ধরে দক্ষিণ দিকে ভূমিকম্পের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে দেরাদুন–মোহান্দের মতো জনবহুল এলাকারও ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নয়া মানচিত্রে হিমালয়ের ফল্টগুলিতে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টি হলে তা সমতলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তা হিসাব করা হয়েছে।

জানানো হয়েছে, দুই জোনের সীমান্তবর্তী এলাকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ জোন হিসেবে গণ্য হবে। ভূতত্ত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশাসনিক সীমারেখাকে নয়।

দুর্বল মাটি বা সক্রিয় ফল্টের উপর নির্মাণ ও সম্প্রসারণে কড়া নিষেধাজ্ঞা সুপারিশ করা হয়েছে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলসহ হিমালয় ঘেঁষা রাজ্যগুলোতে এই পরিবর্তন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন মানচিত্র ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। উঁচু এলাকায় অবস্থিত বাড়ি, সেতু ও অন্যান্য পরিকাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে।