আজকাল ওয়েবডেস্ক: এলাকার মানুষের কাছে মুশকিল আসান নামে পরিচিত বাসুদেব রজক। বয়সে ৭৬ পার করলেও কর্মোদ্যমে আজও তরুণ। নদিয়ার বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি মানুষের খোঁজখবর যেন তাঁর নখদর্পণে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি ভাঙা সাইকেল নিয়ে তিনি গ্রাম ঘুরে বেড়ান, মানুষের সুখ-দুঃখ, সুবিধা অসুবিধা জানতে। পরপর তিনবার তিনি বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন এবং তেহট্ট-১ ব্লকের বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতার দায়িত্বও সামলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
বর্তমানেও যদিও তিনি কোনও পদে নেই, তবুও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে তাঁর পরামর্শ আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় প্রতিটি মানুষকে তিনি চেনেন।
নিজের বুথের প্রতিটি পরিবারের নাম, এমনকী কার বাড়িতে কতজন ভোটার সবই তাঁর মনে অক্ষরে অক্ষরে লেখা। ফলে এলাকার কারও পরিচয় জানতে সমস্যা হলে মানুষ প্রথমেই ছুটে যান তাঁর কাছে।
অনেকেই মনে করেন তিনি হলেন তাঁদের এলাকার 'এনসাইক্লোপিডিয়া'। মানুষের জন্য তাঁর কাজ করার আগ্রহ অনেককেই অবাক করে।
বাসুদেব রজক জানান, সম্প্রতি তিনি খবর পান যে জব কার্ডের 'কেওয়াইসি' আপডেট করার কাজ চললেও বহু মানুষের কাজ এখনও বাকি।
খবর পেয়ে তিনি দ্রুত গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে তালিকা সংগ্রহ করেন এবং নিজেই বিভিন্ন বাড়িতে খবর পৌঁছে দিয়ে মানুষকে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে অনুরোধ করেন। পরে সেখানেই তিনি মানুষের জব কার্ডের কেওয়াইসি করাতে ও ছবি তুলে দিতে সাহায্য করেন।
মানুষের প্রয়োজনে তিনি আদালত, হাসপাতাল কিংবা যে কোনও সরকারি দপ্তরে ছুটে যেতে দ্বিধা করেন না। সারাটা দিন তিনি প্রায়ই শুধু চা খেয়েই কাটিয়ে দেন।
তবু কারও উপকারে লাগতে পারলে সেটাই তাঁর কাছে বড় তৃপ্তি। বয়সের ভার সত্ত্বেও তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের সমস্যা খুঁজে বের করেন এবং সমাধানের পথ দেখান।
বুথের বিএলএ হিসেবে তিনি প্রতিটি বাড়ির অবস্থাই জানেন এবং বিএলও-দেরও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে চলেছেন। তিনবারের পঞ্চায়েত সদস্য ও সাবেক বিরোধী দলনেতা হিসেবে অভিজ্ঞতা তাঁর বিশেষ সম্পদ।
অনেক সময় পঞ্চায়েতের কর্মীরাও নানা প্রকল্প বা কাজের বিষয়ে তাঁর পরামর্শ নেন। সততা, পরিশ্রম, জনসংযোগ এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা সব মিলিয়ে বাসুদেব রজক এলাকার এক অমূল্য সম্পদ। রাজনৈতিক কাজেও তিনি সমান সক্রিয়।
গণঅর্থ সংগ্রহ, কৃষক সভা, ক্ষেতমজুর সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে দলীয় নানা দায়িত্ব তিনি নিয়মিত পালন করে চলেছেন।
এমনকি তীব্র গরম উপেক্ষা করেও তিনি তাঁর দলের সভায় উপস্থিত থাকেন এবং দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো সঙ্গীদের খেয়াল রাখছন।
পার্টি বা সমাজ যেখানেই হোক, আজকের দিনে বাসুদেব রজকের মতো নিবেদিতপ্রাণ মানুষ খুব কমই দেখা যায়। তাঁর নিরলস জীবনযাপন ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা সত্যিই সকলের কাছে অনুপ্রেরণার।
