‘ফ্রন্টিয়ার্স’এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, কিছু বিশেষ রক্তের গ্রুপ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অটোইমিউন লিভার রোগের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। তাই নিজের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানা যেমন জরুরি, তেমনই লিভারের সুরক্ষায় সহায়ক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লাড গ্রুপ A–এর ঝুঁকি বেশি
যাঁদের ব্লাড গ্রুপ A, তাঁদের মধ্যে অটোইমিউন লিভার রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্য দিকে, যাঁদের ব্লাড গ্রুপ B, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। পিবিসি-র ঝুঁকি বোঝার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
গবেষণা কী বলছে
আমাদের লাল রক্তকণিকার পৃষ্ঠে A, B বা H অ্যান্টিজেন নামে কিছু বিশেষ চিহ্ন থাকে, যা রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করে। এই গবেষণার জন্য প্রায় ১,২০০ জনের পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ১১৪ জনের অটোইমিউন লিভার রোগ ছিল।
এরপর ঝুঁকির তালিকায় O, B এবং AB গ্রুপ
দেখা গিয়েছে, লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্লাড গ্রুপ ‘A’ বেশি দেখা যায়। এরপর O, B এবং AB গ্রুপের মানুষের অবস্থান। অটোইমিউন হেপাটাইটিস তখন ঘটে যখন রোগীর রোগ–প্রতিরোধ ব্যবস্থা লিভারের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে। প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস বা পিবিসি–তে পিত্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লিভারে পিত্ত জমে যায়, যার ফলে সিরোসিস ও লিভার ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে।
ব্লাড গ্রুপ A মানেই রোগ হবে—এমন নয়
ব্লাড গ্রুপ A থাকা মানেই যে লিভারের রোগ হবেই—এটা সঠিক নয়। তবে এটি একটি ঝুঁকির বিষয় হওয়ায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অকারণে ক্লান্তি, জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি ছোটখাটো উপসর্গ দেখা দিলেও নিয়মিত পরীক্ষা করানো ভাল। সুস্থ জীবনযাপন, দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই রোগে আক্রান্তদের জন্য অ্যালকোহল আরও ক্ষতিকর
পিবিসি–র মতো দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে ভুগলে অ্যালকোহল আরও ক্ষতিকর। তাই সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। কম নুনযুক্ত খাবার খেলে পেটে জল জমার (অ্যাসাইটিস) ঝুঁকি কমে। পুষ্টিকর খাবার—যেমন গোটা শস্য, ফল, শাক–সবজি, বাদাম এবং ডাল খাওয়া উচিত। অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বি ভাল, আর স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া উচিত।
অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিও থাকে
পিবিসি আক্রান্তদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, আর প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে লিভার সুস্থ থাকে ও হাড় মজবুত হয়।
ধূমপানে লিভারের রোগ আরও বেড়ে যায়
ধূমপান লিভারের রোগকে আরও খারাপ করে। তাই ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা উচিত। নিয়মিত রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের কার্যক্ষমতা ও রোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
