আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় রেলপথ দেশবাসীর জীবনযাত্রার অন্যতম অংশ। রেল প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বন্দে ভারত-এর মতো কিছু ট্রেন দীর্ঘ রুটে তাদের গতি এবং দক্ষতার জন্য বিখ্যাত হলেও, এমন একটি ট্রেন আছে যা সবচেয়ে ধীর গতির ট্রেনের খেতাব অর্জন করেছে। এই বিশেষ ট্রেনটি মাত্র ৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় নেয়। কিন্তু এই ট্রেনটি এত কম দূরত্ব অতিক্রম করতে এত সময় নেয় কেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে, যা মেট্টুপালায়ম-উটি যাত্রীবাহী ট্রেন নামেও পরিচিত, ভারতের সবচেয়ে ধীর গতির ট্রেন। এটি তামিলনাড়ুর উটির মেট্টুপালায়ম রেলওয়ে স্টেশন এবং উদগমণ্ডলম রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে চলে। এটিকে উটি টয় ট্রেনও বলা হয়।

আরও পড়ুন: ভারত আচমকা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিলে কী হবে? ‘জয়ী’ হবেন ট্রাম্প না কি ভুগতে হবে গোটা বিশ্বকে

ট্রেনটি ঘণ্টায় প্রায় ৯ কিলোমিটার বেগে চলে, অর্থাৎ ৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লাগে। এর ফলে দেশের দ্রুততম ট্রেনগুলির তুলনায় এটি প্রায় ১৬ গুণ ধীর গতিতে চলে। ট্রেন যাত্রাটি আপনাকে কেলার, কুনুর, ওয়েলিংটন, লাভডেল এবং ফার্ন হিলের মতো সুন্দর পাহাড়ি স্টেশনগুলির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে।

নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে একটি মিটার গেজ ট্র্যাকের উপর চলে, যা বেশিরভাগ ট্রেনের জন্য ব্যবহৃত ব্রডগেজের চেয়ে সরু। এই লাইনে ১৬টিরও বেশি টানেল, ২৫০টি সেতু এবং ২০০টিরও বেশি তীক্ষ্ণ বাঁক রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি যাত্রাপথকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে এবং ট্রেনটিকে ধীর এবং স্থির গতিতে চলতে হয়।

১৮৫৪ সালে প্রথম এই রেলপথের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কঠিন পাহাড়ি পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৯১ সালে। রেলপথটি ১৯০৮ সালে সম্পন্ন হয়েছিল এবং এটি আজ ভারতের একমাত্র কার্যকর ব়্যাক রেলপথ। এই ট্রেনটি পুরনো ধাঁচের বাষ্পীয় ইঞ্জন দ্বারা চালিত। এটি দক্ষিণ রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত হয় এবং অনেক যাত্রীর কাছে এটি একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ২০০৫ সালে, ইউনেস্কো নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়েকে ওয়ার্ল হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। এটি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের সম্প্রসারণ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছিল।

ট্রেনটি নীলগিরির পাদদেশে অবস্থিত মেট্টুপালায়ম রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে তামিলনাড়ুর উটি স্টেশনে শেষ হয়। কোচগুলি নীল এবং ক্রিম রঙে রঙ করা হয়। বেশিরভাগ কাঠের তৈরি এবং যাত্রীরা যাতে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন তার জন্য বড় জানালা থাকে।

দুই ধরণের কোচ রয়েছে ট্রেনটিতে। ৭২টি আসনবিশিষ্ট প্রথম শ্রেণী এবং ১০০টি আসনবিশিষ্ট সাধারণ শ্রেণী। বাড়তে পর্যটক চাহিদার কারণে, ২০১৬ সালে চতুর্থ কোচ যুক্ত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্সের জামনগর তেল শোধনাগার কেন পাকিস্তানের নিশানায়? কী করতে চান মুনির

ট্রেনটি মেট্টুপালায়ম থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ছাড়ে দুপুর ১২টা নাগাদ উটিতে পৌঁছয়। উটি থেকে দুপুর ২টোয় ফের রওনা দেয় এবং বিকেল সাড়ে ৫টায় ফিরে আসে। আইআরসিটিসি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট বুক করা যায়।

ভারতের সবথেকে শ্লথ গতির অন্য একটি ট্রেন হল হাওড়া-অমৃতসর মেল।  নিজের যাত্রাপথে এটি মোট ১১১ টি স্টেশনে থামে। মোট ১৯১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এই পথ অতিক্রম করে ৩৭ ঘন্টায়। মোট ৫ টি রাজ্য অতিক্রম করে এই ট্রেনটি। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব যায় এই ট্রেনটি। এই ট্রেনের ভাড়াও বেশ কম। এখানে স্লিপার ক্লাসের ভাড়া ৬৯৫ টাকা, থার্ড ক্লাস এসির ভাড়া ১৮৭০ টাকা, সেকেন্ড ক্লাস এসির ভাড়া ২৭৫৫ টাকা এবং ফার্স্ট ক্লাস এসির ভাড়া ৪৮৩৫ টাকা।