আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার গর্ব করে বলছে, গত এক দশকে দেশে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তোলা হয়েছে এবং চরম দারিদ্র্য ৮০% কমেছে। কিন্তু একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ দিনে দু’বেলা পেট ভরে খাবার জোগাড় করতে পারেন না।  

সোমবার বিজেপি একটি রিপোর্টে নীতি আয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য উদ্ধৃত করে দাবি করে, মোদী সরকারের ১১ বছরে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ সময়ে ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার ২৭.১% থেকে কমে ৫.৩% হয়েছে। একই সময়ে চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের সংখ্যা ৩৪.৪৭ কোটি থেকে নেমে ৭.৫২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।  

কিন্তু "Food Deprivation: A Thali Index Reveals What Poverty Estimates Do Not" শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রচলিত দারিদ্র্য পরিসংখ্যান অনেক ভারতীয়ের পুষ্টিহীনতাকে উপেক্ষা করে, যারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও পর্যাপ্ত খাবার পায় না। সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পুলাপরে বালকৃষ্ণন ও অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রিয়া ইউনিভার্সিটির অমান রাজের গবেষণায় 'থালি সূচক' ব্যবহার করে দেখা গেছে, গ্রামীণ ভারতের ৪০% মানুষ দিনে দু’টি নিরামিষ থালি (সুষম খাবার) কিনতে অক্ষম। শহরে এই হার ১০%। আর এক নিরামিষ ও এক আমিষ থালির খরচ (৮৮ টাকা) গ্রামে ৮০% এবং শহরে ৫০% মানুষের নাগালের বাইরে।  

ক্রিসিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে একটি নিরামিষ থালির গড় দাম ৩০ টাকা ও আমিষ থালির ৫৮ টাকা। তবে গবেষকরা স্বীকার করেছেন, বাইরে খাওয়ার খরচ আরও বেশি, ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।   স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে গ্রামে মাসিক ১,৬৩২ টাকা ও শহরে ১,৯৪৪ টাকা আয়কে দারিদ্র্যসীমা ধরা হয়েছে। কিন্তু থালি সূচক বলছে, শুধু খাদ্য খরচ হিসাব করলেও এই আয়ে ৪০% গ্রামীণ ও ২০-৩০% শহুরে মানুষ দিনে দু’বেলা নিরামিষ খাবার জোগাড় করতে পারবে না।  

গবেষকরা বলছেন, দারিদ্র্য পরিমাপে শুধু আয় নয়, পুষ্টির প্রাপ্যতাও বিবেচনা করা উচিত। ২০২৪ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০৫তম, যা বাংলাদেশেরও নিচে। এই পরিসংখ্যান সরকারের দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।   সরকারি তথ্যে দারিদ্র্য কমলেও থালি সূচকের গবেষণা দেখাচ্ছে, ভারতের গরিব মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, দারিদ্র্য পরিমাপের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।