আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ণাটকের আত্তিবেলেতে স্ত্রীকে পারদের ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করার অভিযোগে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। নয় মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মঙ্গলবার মারা গেলেন বিদ্যা নামে ৩০ বছরের এক মহিলা। বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে আত্তিবেলেতে এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর আগে বিদ্যা পুলিশের কাছে দেওয়া বিবৃতিতে স্বামী বাসবরাজ এবং শ্বশুর মারিস্বামাচারির বিরুদ্ধে তাকে পরিকল্পিতভাবে বিষপ্রয়োগের অভিযোগ করেন।

বিদ্যা জানান, বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরের হাতে তিনি নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। স্বামী প্রায়ই তাকে “পাগল” বলতেন, বাড়িতে আটকে রাখতেন এবং আত্মীয়দের বাড়িতে যেতে দিতেন না। চার বছরের সন্তানের সামনেই তাকে অপমান ও মারধর করা হত বলে অভিযোগ।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রির রাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরদিন বিকেলে জ্ঞান ফিরলে ডান উরুতে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। তার সন্দেহ হয় ঘুমের মধ্যে কেউ তাকে ইনজেকশন দিয়েছে। এরপর ক্রমে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে ৭ মার্চ তিনি আত্তিবেলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে অক্সফোর্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

অক্সফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষায় বিদ্যার শরীরে পারদের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। অস্ত্রোপচারের পর সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় তাকে পারদ ইনজেকশন করা হয়েছিল। চিকিৎসা চলতে থাকলেও পারদ তার কিডনি এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছুদিন পর তাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সরানো হয় এবং সেখানে নিয়মিত ডায়ালাইসিস চালানো হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

২৩ নভেম্বর বিদ্যার বিবৃতির ভিত্তিতে আত্তিবেলে থানায় এফআইআর দায়ের হয়। এরপর তাকে “ডাইং ডিক্লারেশন” অনুযায়ী তার স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ চিকিৎসা ও যন্ত্রণার পর গত সপ্তাহে বিদ্যার মৃত্যু হয়, ফলে মামলাটি এখন খুনের মামলায় পরিণত হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ফরেনসিক রিপোর্ট, চিকিৎসকের নথি এবং বিদ্যার বিবৃতির ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। স্বামী বাসবরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

এই ঘটনা এলাকায় গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। নারী অধিকার কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, পারিবারিক নির্যাতন ও সন্দেহজনক অবস্থার বারবার অভিযোগ ওঠার পরও সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো বিদ্যাকে বাঁচানো যেত।

বিদ্যার চার বছরের সন্তান এখন কার হেফাজতে থাকবে, সে বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তার মৃত্যু এখন শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়—নারী সুরক্ষা, গার্হস্থ্য নির্যাতন এবং ন্যায়বিচার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।