আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ভাষায় কথা বলায় ফের একবার বিজেপি শাসিত ওড়িশায় আক্রান্ত হলেন মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েকজন ফেরিওয়ালা। তাঁরা ওড়িশায় গিয়ে বেশি দামে জিনিস বিক্রি করছেন এই অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের চারজন ফেরিওয়ালাকে মারধর করার অভিযোগ উঠল ওড়িশার কয়েকজন বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।
আক্রান্ত ফেরিওয়ালারা ওড়িশা পুলিশের সাহায্য চাইলেও তাদের তরফ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ করেন। মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়া থানার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন পরিযায়ী ফেরিওয়ালা ইতিমধ্যেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। গ্রামের বাড়িতেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয় সূত্রের জানা গিয়েছে, মাস দু'য়েক আগে সাগরপাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা রুহুল শেখ ,নাহিদ সরকার এবং শামীম শেখ-সহ আরও কয়েকজন ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতে যান। তাঁরা সকলে কুদুরা থানার রানীপাড়া এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন এবং সেখান থেকেই ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জিনিসপত্র ফেরির কাজ করতেন।
অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি ওড়িশার বেশ কয়েকজন যুবক মুর্শিদাবাদের ফেরিওয়ালাদের ধরে বাংলা ভাষায় কথা বলা এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের হওয়ার জন্য ব্যাপক মারধর করে।
রুহুল শেখ নামে আক্রান্ত এক যুবক বলেন," গত বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি কেরালায় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করি। এই বছরই প্রথমবার আমি ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে কয়েকজন লোক আমাদের কয়েকজনকে রাস্তায় আটক করে। তারা জানতে চায় আমরা কেন বেশি দামে জিনিস বিক্রি করছি এবং এখান থেকে কেন সমস্ত টাকা নিয়ে মুর্শিদাবাদে চলে যাচ্ছি।"
ওই যুবক অভিযোগ করেন,"ওড়িশার নাগরিকদের আমরা ভারতীয় হওয়ার যাবতীয় প্রমাণপত্র দেখালেও তারা দাবি করে আমাদের আধার কার্ড এবং আমরা সবাই 'জালি'। এরপর তারা আমাদের ব্যাপক মারধর করে।
রুহুল আরও অভিযোগ করেন," পেট্রোল পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছিল আমাদেরকে পুড়িয়ে মারার জন্য। কিন্তু প্রাণ বাঁচতে আমরা সেখানে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম আমাদের কেউ মারধর করেনি।"
রুহুল আরও বলেন ," ওই এলাকা থেকে কোনও ভাবে উদ্ধার পাওয়ার পর আমরা স্থানীয় থানায় গিয়েছিলাম আমাদের অভিযোগ নিয়ে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও অভিযোগ নেয়নি। উল্টে আমাদেরকে ওড়িশা ছেড়ে চলে যেতে বলে।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ঘটনার আগেও মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ এবং লালগোলা থানা এলাকার বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক এবং ফেরিওয়ালা বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশা পুলিশ বেআইনিভাবে আটকে রেখেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফ থেকে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের যাবতীয় নথি ওড়িশা পুলিশকে পাঠানোর পর তাঁরা পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্তি পান।
রুহুলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ,ওড়িশায় ব্যাপক মার খাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে সে তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরে আসতে পারেনি। চিকিৎসার জন্য ওই যুবককে ওড়িশার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কয়েকদিন সেখানে ভর্তি থাকার পর একটু সুস্থ বোধ করায় চারজন ফেরিওয়ালার সঙ্গে রুহুল মুর্শিদাবাদের ফিরে এসেছে।
রুহুলের পরিবারের বক্তব্য, ২০০২-এর ভোটার তালিকায় আমাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের নাম রয়েছে। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলায় আমাদের পরিবারের সদস্যকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
