আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতি তীব্র আসক্তি স্ত্রীর। এমনকী ওইসব কুকুরদের বাড়িতে এনে খাটে পর্যন্ত শুইয়ে রাখা হয়। সেই খাটেই আবার স্বামীকে শুতে দিতেন স্ত্রী। এতেই আপত্তি বরের। স্ত্রীকে সতর্ক করলেও কোনও কাজ হয়নি। যন্ত্রণাময় হয়ে উঠছিল জীবন। পরিস্থিতি থেকে নিস্তার চাইছিলেন ব্যক্তি। উপায় না দেখে তাই স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাই করে বসলেন স্বামী! ঘটনাটি গুজরাটের।
১ ডিসেম্বর গুজরাট হাইকোর্ট এই মামলার শুনানি করবে। গত বছর, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে, পারিবারিক আদালতে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছিলেন স্বামী। কিন্তু, ওই আদালত স্ত্রীকে শুধু নোটিশ জারি করেই স্বামীর করা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ 'নির্যাতিত' স্বামী।
স্বামীর মতে, আবাসিক সমিতির আপত্তি সত্ত্বেও স্ত্রী আমেদাবাদে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে প্রথমে একটি বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে আসেন। এরপর তাঁদের বিবাহিত জীবন সমস্যা তৈরি হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, কুকুরটি তার এবং অন্যান্য বাসিন্দাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পোষা প্রাণীটিকে লালন-পালন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
স্বামী আরও দাবি করেছেন যে, পরে স্ত্রী বাড়িতে আরও কুকুর ঢুকিয়েছিলেন। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ আসছিল। আরও অভিযোগ যে, পথকুকুরগুলি প্রায়শই তাঁকে আক্রমণ করত,কামড়ে দিত এবং কুকুরগুলি প্রায়ই তাঁদের খাটে ঘুমাতো। যদি ব্যক্তিটি নিজের স্ত্রীর পাশে ঘুমানোর চেষ্টা করত তবে তাঁকে কুকুরগুলি কামড়ে দিত!
নিষ্ঠুরতার অন্যান্য ঘটনাও উল্লেখ করেছেন স্বামী। যার মধ্যে রয়েছে, একটি রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর আয়োজিত এপ্রিল ফুলের প্র্যাঙ্ক, যেখানে প্রকাশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তোলা হয়। স্বামী দাবি করেছেন যে, স্টান্টটি তাঁকে বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং জনসাধারণের সামনে বিব্রত করে তুলেছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই ঘটনাগুলির চাপ তাঁর ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম ওই ব্যক্তির ২০০১ সালে দেখা হয়। পরে ২০০৬ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। এই দম্পতির আইনি বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। স্বামী প্রথমে ২০১২ সালে বেঙ্গালুরুতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু আদালত ২০১৬ সালে বিচারিক বিষয়গুলি উল্লেখ করে মামলাটি ফিরিয়ে দেয়। আমেদাবাদের একটি পারিবারিক আদালত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বামীর আবেদন খারিজ করে দেয়, যার ফলে হাইকোর্টে বর্তমান আপিল করা হয়।
স্ত্রী স্বামীর তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে, তিনি কখনও কোনও বেওয়ারিশ কুকুর বাড়িতে আনেননি এবং তাঁর স্বামী একটি ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন যারা পশুদের দেখাশোনা করে। তিনি এপ্রিল ফুলের প্র্যাঙ্কের আয়োজন করার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু বলেছেন যে, এতে কোনও ক্ষতি হয়নি এবং স্বামীর স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দেয়নি।
১১ নভেম্বর মামলার শুনানি চলাকালীন, হাইকোর্টের বেঞ্চ দুই পক্ষকে একটি মীমাংসার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাকারী স্বামীর আইনজীবী ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে স্ত্রী দু'কোটি টাকা দাবি করেছেন।
