আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের বছর ঘোরা দূর, মাসখানেক হয়েছে সবে। তার মাঝেই মৃত্যু যুবতীর। স্বামী বলছেন আত্মহত্যা। বাপের বাড়ির লোকজন বিবরণ দিচ্ছেন, কীভাবে গত কয়েকমাসেই নির্মম অত্যাচারে জর্জরিত হয়েছিলেন যুবতী।
ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশ। ২৩ বছরের মধু সিং-এর বিয়ে হয় নেভি অফিসার অনুরাগ সিং-এর সঙ্গে। লখনউয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে মধুর দেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে ইতিমধ্যেই। তবে মেয়ের মৃত্যুর পরেই অনুরাগের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছে মধুর পরিবার। অভিযোগ, বিয়ের মাস ঘোরার পর থেকেই মধুর গায়ে হাত তোলা শুরু করেন অনুরাগ। কারণে, অকারণে, যখন তখন, যেখানে সেখানে অকথ্য ভাষায় অত্যাচার, অপমান হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের বিষয় হয়ে উঠেছিল। বাবার বাড়ি থেকে মাঝে মাঝেই আরও টাকা নিয়ে যাওয়ার চাপ দিতেন স্বামী, অভিযোগ তেমনটাও।
একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে যোগাযোগের পর চলতি বছরের ২৫শে ফেব্রুয়ারি মধু অনুরাগকে বিয়ে করেন। অনুরাগ হংকং-ভিত্তিক একটি জাহাজ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। বিয়ের সময় তিনি ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন বলে মধুর পরিবারের অভিযোগ। নিজেদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁরা। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওই চ্যাটে দেখা যায় যে অনুরাগ ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য জোর করছেন। মধুর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন তাঁরা ৫ লক্ষ টাকা দিতে পারবেন।
মধুর বাবা ফতেহ বাহাদুর সিং পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, বিয়ের পর অনুরাগ বারবার ফোন করে যৌতুকের জন্য চাপ দেন। হোলির পর, বিয়ের এক মাসেরও কম সময় আগে, অনুরাগ প্রথমবার মধুকে নির্যাতন করেন। মধু তখন তাঁর বাবা মায়ের কাছেই ফিরে মধুর বাবা দাবি অনুযায়ী যৌতুক দিলে, অনুরাগ তাঁকে ফিরিয়ে নেন। অভিযোগ, ফিরিয়ে নিলেও অত্যচার কমেনি।
মধুর বোন প্রিয়া জানিয়েছেন, অনুরাগ মধুকে সন্দেহ করতেন। উদাহরণে বলেছেন, রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় বা দিকে সাইড দিলেও মনে করতেন ছেলে দেখার জন্যই স্ত্রী তা করছেন। অন্য ছেলে-মেয়ে, কোনও বন্ধুর সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে দিতেন না। জোর করতেন মদ্যপানে। প্রিয়া বলেন, তাদেঁর শেষ কথোপকথনের সময় মধু তাকে অনুরাগের সর্বশেষ অত্যাচারের কথা বলেছিলেন। জানান, ‘তাঁরা কোনও একটি থেকে ফিরছিল, মধু গাড়ি চালাচ্ছিল। রাস্তায় গর্ত ছিল এবং বৃষ্টি হচ্ছিল, তাই মধু বা দিক দিয়ে গাড়িটি বা দিক দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অনুরাগের বক্তব্য ছিল, সেখানে বেশকিছু ছেলে দাঁড়িয়েছিল। সেই কারণেই মধু ওদিক দিয়ে গিয়েছিল।‘

মধুর বাবার অভিযোগ, অনুরাগ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং সম্প্রতি শহরের একটি হোটেলে তার প্রাক্তন বান্ধবীর সঙ্গে ছিলেন। সেইসব তথ্যও তাঁদের কাছে রয়েছে বলে জানান। মধুর বাবার অভিযোগ, মধু গর্ভবতী হওয়ার পরে তাঁর গর্ভপাত করান অনুরাগ। ৩ আগস্ট বোনকে মধু জানিয়েছিলেন, তাঁর উপর মারধোর, শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন অনুরাগ। ৪ আগস্ট মধুর মৃত্যুর খবর যায় বাড়িতে।
প্রিয়া বলেন, তিনি মধুকে বাড়িতে আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মধু নিজেই তা চাননি। দিদির এই পরিণতি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বোন।
