আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপরেই ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কীভাবে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি? গোটাটাই পূর্ব পরিকল্পিত না কি আচমকাই ঘটেছিল সবটা? হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যম।

সে দেশের সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, হাসিনার বিমান প্রথমে কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন করা হয় এবং উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দোন বিমানবন্দরে অবতরণ করানো হয়। এখন মনে হচ্ছে, সকলের দৃষ্টি এড়াতে এটি করা হয়েছিল। হাসিনার বিমান কম সময় বাংলাদেশের আকাশে থাকতে চাইছিল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনে হচ্ছিল কলকাতার দিকেই যাচ্ছে। বিমানটি অনেক দেরিতে দিল্লির দিকে অভিমুখ ঘোরায়।

বিমান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে দিল্লিগামী বিমানগুলিকে কলকাতাগামী বিমানের তুলনায় বাংলাদেশের আকাশসীমায় বেশি সময় থাকতে হয়। ঢাকা-কলকাতা রুটটি পশ্চিমে সরাসরি বিমান চলাচলের পথ। অন্যদিকে, দিল্লিগামী বিমানটি উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং বাংলাদেশ-নিয়ন্ত্রিত আকাশে বেশি সময় থাকে।

একটি সূত্র বাংলাদেশি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, ঢাকা এবং কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যে একটি হটলাইন রয়েছে যা একে অপরকে বিমানের অবতরণের বিষয়ে অবহিত করে। হাসিনার বিমানটিকে প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যাতে উত্তেজিত জনতা দৃষ্টি এড়ানো যায়। যাঁরা সেই সময় হাসিনাকে হাতের কাছে পেলে খুনই করে ফেলতেন।

বিমানটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি থেকে বিকাল ৩টার কিছু পরে কলকাতার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ পরিকল্পনা দাখিল করে। বিমানটিকে ৪১৩১ নম্বরের একটি 'স্কোয়াক কোড' দেওয়া হয়েছিল- এটি একটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কর্তৃক নির্ধারিত চার অঙ্কের অনন্য কোড - এবং এটি কলকাতা এটিসি, 'গন্তব্য'-এর সাথে ভাগ করা হয়েছিল।

কলকাতা এয়ার ট্রাফক কন্ট্রোলকে বিমানে যাত্রাপথের বিষয়ে জানানোর পর বাংলাদেশ বায়ুসেনার বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি থেকে বিকেল ৩টের সময় হাসিনার বিমান কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আকাশে উঠেই নিজের ট্র্যন্সপন্ডার বন্ধ করে দেয় বিমানটি। এর ফলে ঢাকা এবং কলকাতা কারও ব়্যাডারেই বিমানটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না। যদিও বিমানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছিল।

ঢাকা থেকে কলকাতার আকাশে প্রবেশ করার পরেই ফের চালু করা হয় ট্রান্সপন্ডারগুলি। এর পরেই পাইলটকে এটিসি-তে যোগাযোগ করতে হয়েছিল। এই মুহুর্তে ভারতীয় বিমান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি C-130J বিমান ট্র্যাক করতে শুরু করে। যা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ছিল।

ভারতের কাছে হাসিনার বিমান অবতরণের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারতের তরফ থেকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়। ওই সময় হাসিনার অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গাজিয়াবাদে অবতরণের পরেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে জানান।