আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে টানা মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০৪টি রাস্তা যানচলাচলের জন্য বন্ধ হয়ে রয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে ৩০৭টি রাস্তা রবিবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। যার মধ্যে রয়েছে আবার দুটি জাতীয় সড়ক। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর সোমবার ও মঙ্গলবার রাজ্যের কিছু কিছু স্থানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনায় একটি ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করেছে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই সময়ের মধ্যে ভরাড়ি এলাকায় সর্বাধিক ১০৮.২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও মুরারি দেবী এলাকায় ৮২ মিমি, নৈনা দেবী ৭৪.৪ মিমি, মালরাঁও ৫৬.২ মিমি, ব্রাহ্মণী ৪৫.৪ মিমি, উনা ৩৮ মিমি এবং জট এলাকায় ৩৬.২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত রাজ্যের দুর্যোগ-আক্রান্ত মান্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি৷ বন্ধ রয়েছে ১৫৬টি রাস্তা। এরপর কুল্লু জেলায় ৬৮টি রাস্তা বন্ধ । রাজ্য ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের (SEOC) তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যজুড়ে ২৮৪টি বিদ্যুৎ পরিবহন ট্রান্সফরমার এবং ২১০টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২৫ সালের ২০ জুন থেকে ২ অগাস্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে রাজ্যটিতে মোট ১,৬৯২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গিয়েছে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত-সম্পর্কিত নানা দুর্ঘটনায় ১০১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এখনও পর্যন্ত দুর্যোগে ৩৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ২০ জন ডুবে যাওয়া, ১৯ জন পড়ে যাওয়া, ১৭ জন মেঘভাঙা, ৮ জন আকস্মিক বন্যা এবং ৫ জন ভূমিধসের কারণে মারা গিয়েছেন।

গোটা রাজ্যে প্রায় ১,৬০০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫১টি আকস্মিক বন্যা, ২৮টি মেঘভাঙা এবং ৪৫টি বড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

শুক্রবার লাহৌল ও স্পিতি জেলায় একটি স্রোত পারাপারে সাহায্য করতে একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। ওইদিন উনা জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৬০.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে রাস্তাঘাট, বাজার এবং অন্যান্য এলাকায় জল জমে যায়। একইসঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

আরও পড়ুনঃ শ্রীনগর বিমানবন্দর রণক্ষেত্র! অতিরিক্ত হ্যান্ড ব্যাগেজের পরিণতি এই? ভিডিও ভাইরালে চমকে উঠেছে শহরবাসী 

বর্তমানে রাজ্যের মোট ৪০৪টি রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। যার মধ্যে খাব-গ্রামফু জাতীয় সড়ক অন্যতম। মান্ডি জেলায় ১৭৪টি, চাম্বা জেলায় ১১১টি এবং কুল্লু জেলায় ৬৭টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। রাজ্যজুড়ে আরও ৪১১টি বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার এবং ১৯৬টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চণ্ডীগড়-ধর্মশালা জাতীয় সড়কেও কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছে। এমনকি কিছু বাড়িতে জল অবধি ঢুকে পড়েছে। এই বন্যার মতো পরিস্থিতি শিল্প এলাকা, আবাসিক অঞ্চল এবং সরকারি অফিসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবাওয়ার জেরে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাসিন্দাদের অনুরোধ করেছেন যেন তারা বিপদে পড়লে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল সেলের টোল-ফ্রি নম্বর ১০৭৭-এ ফোন করেন এবং নদীর পাড় বা কোনওরকম খাদ বা গর্তে না যান।

উন্নয়ন প্রকল্প, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিয়াস নদী ও তার উপনদীগুলোতে জল ভয়ানক বেড়ে গিয়েছে।  হামিরপুর জেলার সুজানপুর তিরা এলাকার কাছে বিয়াস নদীর একটি সেতুর অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। মালানা-II হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পের একটি কাফারড্যামের আংশিক ভাঙনের ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে একটি ডাম্পার ট্রাক, একটি রক ব্রেকার ও একটি গাড়ি স্রোতে ভেসে গিয়েছে। শনিবার রাজ্যের রাজ্যপাল শিব প্রতাপ শুক্ল মান্ডি জেলার দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।