আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (Special Intensive Revision, SIR) ঘিরে প্রবল প্রতিবাদের জেরে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো ব্যাহত হল লোকসভার কাজ। অধিবেশনের শুরুতেই হইচই ও স্লোগান উঠলে স্পিকার ওম বিড়লা মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই সংসদ মুলতবি ঘোষণা করেন। দুপুর ২টো পর্যন্ত স্থগিত থাকছে লোকসভার কার্যক্রম। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন কমিশন বিহারে ভোটার তালিকার যে বিশেষ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ, এই প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ভোটারদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের শেষের দিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
এদিন অধিবেশন শুরু হতেই কংগ্রেস, আরজেডি, ডিএমকে, তৃণমূল সহ একাধিক বিরোধী দলের সাংসদরা বিহার ইস্যুতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কয়েকজন সাংসদ চলে আসেন ওয়েলে এবং হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়েও প্রতিবাদ জানান। সংসদের স্পিকার ওম বিড়লা তাঁদের বারবার অনুরোধ করেন আসনে ফিরে যেতে এবং আশ্বাস দেন—নিয়ম অনুযায়ী বিরোধীদের কথা বলার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হবে। বিড়লা বলেন, “আমি কংগ্রেস নেতা কে.সি. বেণুগোপালের নাম উল্লেখ করে বলছি, তাঁর দলের এমন সংস্কৃতি কখনও ছিল না যে তারা স্লোগান দিয়ে, প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে সংসদ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করবে।” স্পিকারের মতে, এমন আচরণ সংসদের মর্যাদার পরিপন্থী এবং এতে দেশবাসীর কাছে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতে সাইবার অপরাধে বিস্ফোরক বৃদ্ধি, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আর্থিক প্রতারণায় ক্ষতি ৩০,০০০ কোটিরও বেশি
তবুও বিরোধীদের হইচই চলতেই থাকে। ফলে মাত্র একটি প্রশ্ন নেওয়ার পর, সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই অধিবেশন মুলতবি করে দেন স্পিকার। লোকসভার এই মনসুন অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব এখনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি। গত চার দিন ধরেই কোনও না কোনও ইস্যুতে বিরোধীদের বাধায় কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের আলোচনার জন্য প্রস্তুতির বার্তা দেওয়া হলেও প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত।
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, এই সংশোধনী কার্যক্রম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা আশঙ্কা করছেন, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অনেকে দাবি করছেন, কিছু এলাকায় এনআরসি-সদৃশ পদ্ধতিতে নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন শুধুমাত্র বিহারেই এই ধরনের বিশেষ সংশোধন করা হচ্ছে, এবং তা নির্বাচনের আগে এতো হঠাৎ করে কেন জরুরি হয়ে উঠল?
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি রুটিন প্রক্রিয়া এবং ভোটার তালিকাকে নির্ভুল ও হালনাগাদ রাখার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধীদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়ার আড়ালে সরকারের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন ভোটার এলাকা ও গোষ্ঠীভিত্তিক হেরফেরের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলকে প্রভাবিত করতে চাইছে। বিহারে ইতিমধ্যেই কয়েকটি এলাকায় এই সংশোধনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় স্তরে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, যেখানে নাগরিকেরা দাবি করছেন, তাঁদের নাম হঠাৎ করেই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। সর্বোপরি, ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়টি এখন শুধু প্রশাসনিক নয়, একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে। সংসদের ভেতরে-বাইরে এই ইস্যুকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
