আজকাল ওয়েবডেস্ক:  কংগ্রেস নেতা ও লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর গুরুতর অভিযোগকে প্রথমে “ভিত্তিহীন ও ভুল” বলে উড়িয়ে দিলেও, পরের দিনই কার্যত তাঁর দাবির একাধিক অংশ স্বীকার করে নিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার প্রকাশিত এক বিশদ নোটে ইসি জানিয়েছে, কর্ণাটকের আলন্দ ও মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা এলাকায় বিপুল সংখ্যক ভোটার মুছে ফেলা ও ভুয়ো সংযোজনের আবেদন পাওয়া গিয়েছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই সন্দেহজনক বিষয় সামনে আসায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

রাহুল বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন, আলন্দে ৬,০১৮ ভোটারকে ভুয়ো ভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর দাবি ছিল, বহিরাজ্যের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে কংগ্রেসের শক্তিশালী বুথগুলো চিহ্নিত করে সিরিয়াল নম্বর ১-এ থাকা ভোটারদের নামেই মুছে ফেলার আবেদন করা হয়। তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনায় এফআইআর হলেও, গত ১৮ মাসে কর্ণাটক সিআইডি ১৮টি চিঠি পাঠিয়েও কমিশনের  সহযোগিতা পায়নি।

শুক্রবার কমিশনের বিবৃতিতে স্বীকার করা হয়, আলন্দে ৬,০১৮টি ভোটার মুছে ফেলার আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছিল। তদন্তে দেখা যায়, এর মধ্যে মাত্র ২৪টি আসল এবং বাকি ৫,৯৯৪টি ভুয়ো। সেই কারণে শুধুমাত্র ২৪টি আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং বাকিগুলি বাতিল করা হয়। এত বিপুল ভুয়ো আবেদনের পেছনে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় আলন্দের নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক তদন্ত শুরু করেন এবং এফআইআর দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন: থানায় ঢুকিয়ে ব্যক্তিকে খাওয়ানো হল মূত্র, ধোয়ানো হল জুতোর ফিতে, পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া

অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভায় নতুন ভোটার সংযোজন নিয়েও একই ছবি দেখা যায়। সেখানে মোট ৭,৭৯২টি ভোটার সংযোজনের আবেদন জমা পড়ে। যাচাইয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে ৬,৮৬১টি ভুয়ো এবং কেবলমাত্র বাকি কয়েকটি সঠিক। এই ঘটনাতেও নির্বাচন আধিকারিক তদন্তের নির্দেশ দেন এবং স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।

যদিও ইসি জানিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার ক্ষেত্রে সরাসরি অনলাইনে কোনও সাধারণ নাগরিকের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। বরং ফর্ম ৭ পূরণ করেই কেবল ভোটার বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। কমিশনের দাবি, কোনও ভোটারকে বাদ দেওয়ার আগে অবশ্যই নোটিশ পাঠানো হয় এবং শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়।

তবে রাহুল গান্ধীর উত্থাপিত একাধিক তথ্য, যেমন— বিপুল ভুয়ো আবেদন, এফআইআর দায়ের ও তদন্তের বিষয়টি ইসির নোটে কার্যত নিশ্চিত হয়েছে। যদিও কমিশন বলেছে, কর্ণাটকের সিইও কালাবুরগি জেলার পুলিশের হাতে সব প্রমাণ তুলে দিয়েছেন এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।

রাহুলের দাবি, এই ভুয়ো সংযোজন ও বাদ দেওয়ার পিছনে একটি কেন্দ্রীভূত সফটওয়্যার-চক্র কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য নির্বাচনে কংগ্রেসকে দুর্বল করা। তিনি ইসিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের সমস্ত প্রমাণ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রথমে অভিযোগ খারিজ করলেও, ইসির সর্বশেষ বিবৃতিতে রাহুলের বক্তব্যের অনেকটাই সত্য বলে প্রতীয়মান হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন তৈরি হয়েছে।